শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১০:১৬ অপরাহ্ন

সব ভ্যাকসিন এক উৎস থেকেই কেন?

বাংলা ট্রিবিউন : অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার ভ্যাকসিন কবে আসবে সে নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে ভ্যাকসিনের জন্য গঠিত বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে জুনের আগে ভ্যাকসিন আসার সম্ভাবনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবলমাত্র একটি উৎস থেকে ভ্যাকসিন আনার পরিকল্পনা ছিল অদূরদর্শিতা।

গত ৩ জানুয়ারি বার্তাসংস্থা এপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন রফতানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার। ফলে দরিদ্র দেশগুলোর ভ্যাকসিন পেতে আরও কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে। ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালা এপিকে বলেন, ‘কয়েক মাসের জন্য ভ্যাকসিন রফতানির অনুমতি দেবে না ভারত। ভারতীয়রা যাতে আগে ভ্যাকসিন পায়, সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এর পর দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, টিকা কবে পাওয়া যাবে, সেটা নিশ্চিত নয়। তিনি বলেন, ‘সমস্যাটি নতুন করে তৈরি হয়েছে। শনিবারও (৩ জানুয়ারি) আমরা নিশ্চিত ছিলাম টিকা পাবো। আজ শুনলাম ভারত টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।’

যদিও সেদিন সন্ধায় বাংলাদেশে সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহের দায়িত্বে থাকা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছিলেন, চুক্তি হওয়াতে দেশে ভ্যাকসিন আসা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না।

ভারত থেকে কবে ভ্যাকসিন আসবে সেটা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলে গত ৭ জানুয়ারি মন্তব্য করেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।

তিনি বলেন, ‘সরকার এবং অনেক প্রতিষ্ঠান এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকায় ভ্যাকসিন আসতে হয়তো কিছুটা সময় লাগতে পারে। এটি স্পর্শকাতর বিষয়। অন্য কোনও পণ্যের মতো নয়।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নান একাধিকবার বলেছেন, জানুয়ারির মধ্যে আমরা করোনার ভ্যাকসিন পাবো। এ জন্য ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ থেকে সেরাম ইন্সটিটিউটে অগ্রিম টাকাও দেওয়া হয়েছিল।

একটি মাত্র উৎস থেকে কেন ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া হচ্ছে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অন্য সবার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হচ্ছে। কিন্তু সেরাম ইন্সটিটিউট ছাড়া আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ খুব বেশি এগোয়নি। কারও সঙ্গে চুক্তিও হয়নি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেখানে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কোম্পানির একাধিক ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানে কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল থাকাটা ঠিক হয়নি।

একই মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বলেন, ‘এই মহামারির সময়ে বিষয়টি বড় পরিসরে চিন্তা করা উচিত ছিল। সেটা হয়নি।’

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির ১৯তম সভার সুপারিশে বলা হয়, ভ্যাকসিনের জন্য একাধিক উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ করে যেসব দেশে ভ্যাকসিন তৈরিতে সে দেশের সরকারের সম্পৃক্ততা আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।

কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘টিকার জন্য একাধিক সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করার দরকার ছিল। আমরা তা করিনি। উল্টো এ নিয়ে অবহেলা করেছি।’

স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘আমরা প্রথম ট্রেন মিস করেছি কাউকে ট্রায়াল না দিতে দিয়ে। ট্রায়াল হলে অনেক এগিয়ে থাকতাম। ভ্যাকসিন পাওয়া দরিদ্র দেশগুলোর জন্য কষ্টকর, এটা মেনে নিতে হবে। সবাই এখানে ব্যবসা করতে নেমেছে। একেক দেশের জন্য ভ্যাকসিনের তাই একেক দাম।’

আমাদের দেশের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশও একাধিক উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা করেছে এবং তার সুফল তারা ইতোমধ্যে পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণার জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান ও গবেষকদের এদেশে আসতে দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানো যেত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়টিও দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিতে পারেনি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888