শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৯:১২ অপরাহ্ন

চকলেটের লোভ দেখিয়ে একের পর এক…

প্রথম আলো : সব কটি ঘটনাই ঘটেছে একইভাবে। টাকা কিংবা চকলেটের লোভ দেখিয়ে কৌশলে তুলে নেন অটোরিকশায়। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে নিয়ে যান নির্জন স্থানে। ধর্ষণ শেষে পুনরায় আশপাশের এলাকায় নামিয়ে দিয়ে যান।

এভাবে তুলে নিয়ে একের পর এক শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদের শান্তিনগর এলাকায়। গত পাঁচ মাসে ওই এলাকা থেকে পাঁচ শিশুকে তুলে নেওয়া হয়। এর মধ্যে একজন ছাড়া বাকিরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সর্বশেষ ৫ জুলাই এক শিশুকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। শিশুটি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

ভুক্তভোগী পাঁচ শিশুর বয়সই ১০ বছরের নিচে। তাদের মধ্যে একজন ছেলে। এর মধ্যে তিনটি ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে বায়েজিদ থানায় মামলা করে পরিবার। কেউ কেউ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দিয়েও পুলিশকে সহায়তা করেন। কিন্তু পুলিশ সেভাবে সক্রিয় হয়নি বলে অভিযোগ। শেষের ঘটনাটির পর এলাকার মানুষ আগের চারটি ঘটনার বিষয়ে জানতে পারেন।

যেভাবে ঘটছে ঘটনাগুলো

বায়েজিদ থানা থেকে কয়েক শ গজ দূরে অবস্থিত শান্তিনগর এলাকাটি কিছুটা ঘনবসতিপূর্ণ। সেখানকার বেশির ভাগ বাসায় ভাড়া থাকে পোশাক কারখানা ও আমিন জুট মিলের শ্রমিকের পরিবার। শুক্রবার বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে কথা হয় চার ভুক্তভোগী শিশুর মা-বাবার সঙ্গে। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি এলাকার এ ওয়ান প্রপার্টিজ নামের একটি স্থান থেকে দুপুরে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে টাকার লোভ দেখিয়ে অটোরিকশার সামনের সিটে তুলে নেন চালক। পরে পাহাড়ঘেরা একটি এলাকায় নিয়ে ধর্ষণ করেন। বিকেল পাঁচটার দিকে একইভাবে সামনের আসনে নিজের পাশে বসিয়ে শান্তিনগর এলাকার অদূরে নামিয়ে দেন। খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজন গিয়ে উদ্ধার করে তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে পাঁচ দিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয় মেয়েটি। তার মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছিলাম। এরপর কয়েকবার থানায়ও গিয়েছি। আসামি ধরার বিষয়ে পুলিশ বলছে, ‘তোমরাও দেখো, আমরাও দেখি’।’

একই মাসের ২৩ তারিখ বেলা পৌনে তিনটার দিকে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া আরেকটি মেয়েকেও টাকার লোভ দেখিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তাকে পেছনের আসনে বসানো হয়। গাড়িটি নগরের জিইসি মোড় এলাকায় গেলে মেয়েটি কৌশলে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে।

চট্টগ্রামের বায়েজিদ : এক ব্যক্তিকে সন্দেহ এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর
তিনটি ঘটনায় মামলা দায়ের

মার্চের শুরুর দিকে একইভাবে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রকে। ১১ জুন একইভাবে অটোরিকশার সামনের আসনে তুলে নিয়ে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়।

সর্বশেষ ৫ জুলাই পান আনতে গিয়ে অপহরণের শিকার হয় ৯ বছর বয়সী এক শিশু। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় মামলা করেন শিশুটির বাবা।

সন্দেহের তির তাঁর দিকে

অভিভাবক ও এলাকার তরুণেরা এর সঙ্গে কে জড়িত থাকতে পারে, তা জানার চেষ্টা করেন। তাঁরা জানতে পারেন, ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বায়েজিদে একজন অটোচালক এক শিশুকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। শিশুটি চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে ধরে ফেলেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় ধর্ষিত দুই শিশুর অভিভাবক তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।

তখনকার বায়েজিদ থানার ওসি (বর্তমানে কোতোয়ালি) মোহাম্মদ মহসীন সেই সময় ওই ব্যক্তিকে সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। সম্প্রতি যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মামলার পর ওই ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। কয়েক বছর জেলে থাকার পর মুক্তি পান।

এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের সন্দেহ হলে ওই ব্যক্তির ছবি সংগ্রহ করেন তাঁরা। পরে ধর্ষণের শিকার হওয়া চার শিশুকে ওই ব্যক্তির ছবি দেখানো হয়। তারা সবাই নিশ্চিত করে ওই ব্যক্তিই তাদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে।

বায়েজিদ থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, ‘একজনই এই ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে ধারণা করছি। তাকে ধরার বিষয়ে অনেকটা দূর এগিয়েছিও আমরা।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888