শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সংস্কারকৃত জরুরী বিভাগের এক বছর : লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সংস্কারকৃত জরুরী বিভাগ চালুর এক বছর পূর্তি হলো আজ ২০ জুলাই। উদ্বোধনের পর থেকে গত এক বছরে কক্সবাজার জেলার ১ লাখেরও বেশি মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছে জরুরী বিভাগ, যাদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের রাখাইন থেকে আশ্রয় নেয়া জনগোষ্ঠী। জেলার ৩৫ লাখ মানুষের প্রধান সরকারী হাসপাতালের জরুরী বিভাগ হিসেবে এ বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের জরুরী চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখতে ২৪ ঘন্টাই কাজ করে যাচ্ছেন।

জরুরী বিভাগের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জুলাই ২০১৯ সাল থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে অংশীদার হয়ে কাজ করছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি); যা কোভিড-১৯ মহামারীর সময়েও অব্যাহত আছে।

আইসিআরসির পক্ষ থেকেসংস্কারকৃত জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরচিকিৎসা দিতে বিভাগে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ঔষধ নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা জরুরী চিকিৎসাসেবার দক্ষতার উপর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। গত এক বছরে জরুরী বিভাগ প্রায় ২ হাজারের মতো সংকটাপন্ন রোগীকে জরুরী চিকিৎসা দিয়েছে, যাদের ৯৮ শতাংশের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। একজন রোগীর সাথে একজন সহায়তাকারী প্রবেশ করার নিয়ম চালু করার মধ্য দিয়েজরুরী বিভাগে অপ্রয়োজনীয় ভিড় হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও, জরুরী বিভাগে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করার কারণে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে ৬৫ শতাংশ অপ্রয়োজনীয় ভর্তি রোধ করা সম্ভব হয়েছে, যার কারণে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে রোগীদের ভিড় কমে এসেছে।

জেলার ব্যস্ততম হাসপাতালের জরুরী বিভাগের গুরুত্ব তুলে ধরে আইসিআরসি কক্সবাজার সাব ডেলিগেশনের অফিস প্রধান ফারুখ ইসলোমভ বলেন, “ উদ্বোধনের এক বছরের মধ্যে জরুরী বিভাগ কক্সবাজার জুড়ে ১ লাখের বেশি মানুষকে জরুরী চিকিৎসা সেবা দিয়েছে, যাদের মধ্যে স্থানীয় জনসাধারণ ও রাখাইন থেকে আশ্রয় নেয়া জনগোষ্ঠী রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা পরিচালনার মান উন্নত করতে বিভাগে ট্রিয়াজ সিস্টেম চালু করা হয়েছে, যাতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন এমন রোগীদের প্রথমে জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়, এতে করে রোগীদের কষ্ট কমছে এবং জীবন রক্ষা পাচ্ছে।”

দেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেও জরুরী বিভাগ প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রোগীদের জরুরী চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছে। কোভিড সংক্রমণ রোধের প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ হিসেবে জরুরী বিভাগে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, প্রবেশের পূর্বে তাপমাত্রা পরীক্ষা এবং হাত ধোয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর বাইরে জরুরী বিভাগের মেঝেসহ সব জায়গা নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করার হচ্ছে। রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় সুরক্ষার জন্য জরুরী বিভাগে কর্মরত সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম(পিপিই) সরবরাহ করা হয়েছে।

জরুরী বিভাগে আইসিআরসির সহযোগিতার প্রশংসা করে সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের প্রধান ডা. শাহীন আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন,“জরুরী বিভাগে আগে দিনে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবার জন্য আসত, তবে আইসিআরসির সহযোগিতায় এ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের পরে আমরা প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ রোগী পাচ্ছি। এই বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা গত এক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখন এটি বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য একটি মডেল জরুরি বিভাগ বলে আমি মনে করি।”

বর্তমানে সদর হাসপাতালে একটি বিশেষায়িত জরুরী বিভাগ খোলার কাজ চলছে যেন ফ্লুর লক্ষণ থাকা রোগী এবং সন্দেহভাজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জরুরী চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায়। নতুন এ জরুরী বিভাগে যেসব ডাক্তার এবং নার্স দায়িত্ব পালন করবেন তাদেরকেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আইসিআরসি।পাশাপাশি নতুন এ জরুরি বিভাগের জন্য প্রায় ৮ কোটি টাকা মূল্যের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ঔষধ প্রদান করেছে আইসিআরসি।

এছাড়াও, হাসপাতালে মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য একটি রেফ্রিজারেটেড কনটেইনার সরবরাহের জন্য সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে আইসিআরসি। এর ফলে মৃতদেহ দাফনের জন্য পরিবারে হাতে হস্তান্তরের আগে অস্থায়ীভাবে এ কনটেইনারে রাখা যাবে। পাশাপাশি, আগামী ৩ বছরের মধ্যে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগকে ইমার্জেন্সি মেডিসিনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সেন্টার ফর এক্সসিলেন্স হিসেবে গড়ে তুলতে এবং জরুরী বিভাগে কর্মরত ডাক্তার এবং নার্সদের ইর্মাজেন্সি মেডিসিনের উপর প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণ চালুর কাজ চলছে।

সদর হাসপাতালে সহযোগিতার পাশাপাশি আইসিআরসি উখিয়া এবং টেকনাফের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) সাথে কাজ করছে। এছাড়াও ২০১৭ সালে রাখাইন সংকট শুরুর পর থেকেই সেখানকার স্থানীয় মানুষ এবং রাখাইন থেকে আশ্রয় নেয়া জনগোষ্ঠীর মানুষদের মোবাইল মেডিকেল টিমের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888