বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

কক্সবাজারে ৩ লাখ কোটি টাকা উন্নয়নের মহাযজ্ঞে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও ১০ দাবি

বিশেষ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আগামি ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার সফরে আসছেন। ওই দিন উখিয়ার ইনানীস্থ বঙ্গোপসাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক নৌ মহড়ায় অংশ গ্রহণ শেষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নিকটবর্তী লাবণীয় পয়েন্টের শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশাল জনসভায় ভাষণ প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী।

এবারের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর কক্সবাজারবাসির কতৃজ্ঞতা প্রকাশের অপূর্ব সুযোগ বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক, পেশাজীবী সহ সচেতন মহল।

তাদের দাবি, বর্তমান সরকারের সময় কক্সবাজারের সার্বিক চিত্র বদলে যাচ্ছে। এখানে ২৭ টি মেগা প্রকল্প সহ তিন লাখ কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন হচ্ছে। এখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেললাইন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এসপিএম প্রকল্প, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্র বন্দর সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের চলছে। সরকারের সময়ে জেলাবাসি পেয়েছেন মেরিন ড্রাইভ সড়ক, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্প, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, বিকেএসপি সহ জেলা-উপজেলার গ্রামে গ্রামে নানা উন্নয়ন। এসব উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জেলাবাসি কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানানো সুযোগ ৭ ডিসেম্বর।

আর এই কতৃজ্ঞতার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও ১০ দাবি জানানোর পক্ষে জোরালো অভিমত প্রকাশ করেছেন সকলেই। রাজনৈতিক, পেশাজীবী সহ সচেতন মহল অভিমত, কক্সবাজারের উন্নয়ন শুধু কক্সবাজার নয়, পাল্টে যাবে দেশের চেহারা। এরই মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বৈশ্বিকভাবেও গুরুত্ব বাড়ছে বাংলাদেশের। আর সমুদ্র শহর কক্সবাজার হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক একটি পয়েন্টে।

ফলে এখানো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার সহ আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র করতে বিশেষ নীতি ঘোষণা, পর্যটন বান্ধব শহর রক্ষা বাঁধ, সামুদ্রিক অর্থনীতির স্বচ্ছ ঘোষণা, কক্সবাজার-মহেশখালীর সাথে সেতু সংযোগ, মাতামুহুরি উপজেলা গঠণ, লবণ বোর্ড গঠণ, অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যবসায়ীদের কোঠা, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু ও রোহিঙ্গা সংকট নিরসন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দাবি উঠেছে। যে ১০ টি দাবির পক্ষে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ নানাভাবে আলোচনা হচ্ছে জোরালোভাবে। আর দাবি এবং প্রস্তুতির সকল বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ সংবাদ সম্মেলনের আহবান করেছে সোমবার সকাল ১১ টায়।

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান কক্সবাজারটাইমসকে জানান, প্রকৃতিগতভাবে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা কক্সবাজার। এখানে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ার পর আন্তর্জাতিক মহলে আরও ব্যাপক পরিচয় লাভ করেছে। একটি আধুনিক পর্যটন শহর করতে এখানে প্রযুক্তি নির্ভর মহাপরিকল্পনার কাজ চলছে। এখানে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ না থাকায় কক্সবাজারের সন্তানদের বাইরে ছুটতে হচ্ছে। অথচ উন্নয়নের এ মহাযজ্ঞে এখানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিনের দাবি। বেসরকারিভাবে একটা থাকলেও তার গুরুত্ব কম। এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করছে জেলার তরুণ সমাজ।

কক্সবাজার সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেম কক্সবাজারটাইমসকে জানান, সাগরের কিনারে একটি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু দেশে নয়; আন্তর্জাতিক মহলেও গুরুত্ব পাবে অনেক বেশি।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আবছার কক্সবাজারটাইমসকে জানান, জেলাবাসি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কর্তৃপক্ষের কোন শেষ নেই। মেগা প্রকল্পের কারণে এ জেলা দেশের না আন্তর্জাতিক একটি পয়েন্ট। এখানে মহেশখালীতে যে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে তার জন্য কক্সবাজার জেলা শহরের সাথে মহেশখালীর যোগাযোগ সহজ করা জরুরী। এর জন্য মহেশখালীর সাথে কক্সবাজারের সেতু সংযোগের দাবি উঠেছে।

তিনি সমুদ্র বিজয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে কক্সবাজারটাইমসকে বলেন, “ সমুদ্র বিজয় আমাদের সামুদ্রিক নীল অর্থনীতির বিশাল হাত ছানি দিচ্ছে। এ অর্থনীতির উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ঘোষণা বা পরিকল্পনা ৭ ডিসেম্বর জানাবেন। একই সঙ্গে সম্ভাবনার পর্যটন শিল্পের বিকাশে কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার সহ বিনোদন কেন্দ্র জরুরী হয়ে উঠেছে। যেখানে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের থিয়েটার প্রদর্শনী সহ দেশী-বিদেশী পর্যটকের বিনোদনের নানা মাধ্যম। এতে পর্যটন শহরের গুরুত্ব বাড়বে আরও অনেক বেশি।

চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় আসনে এলাকাটি ব্যাপক উল্লেখ করে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম কক্সবাজারটাইমসকে বলেন, চকরিয়া উপজেলা একটি পৌরসভা ও ১৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। জেলায় সবচেয়ে বড় উপজেলায় মাতামুহুরীকে উপজেলা ঘোষণা অনেক জরুরী। সাধারণ জনগনের পক্ষে এমন দাবি উঠেছে। এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে মাতামুহুরীকে উপজেলা ঘোষণার দাবি জানানো হবে।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কর্মাসের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী কক্সবাজারটাইমসকে বলেন, উন্নয়নের মহাযজ্ঞে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও গভীর সমুদ্র বন্দর ব্যবসায়ীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা যেন বিশেষ একটি কোটা পান আর নিরাপদে ব্যবসা করতে পারেন তার দাবি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ অংশে ব্যাপক ভাঙ্গনের কথা উল্লেখ করে পর্যটন বান্ধন শহর রক্ষা বাঁদের দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজার পিপলস্ ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ। তিনি কক্সবাজারটাইমসকে বলেন, পর্যটনের বিকাশের জন্য বালিয়াড়ি রক্ষা করতে হবে। কক্সবাজার মানেই সমুদ্র। তাই বাঁধ নিমার্ণ জরুরী। একই সঙ্গে দেশের একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ লবণ শিল্প রক্ষা বোর্ড গঠণ সহ প্রয়োজনীয় ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দেবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।

উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস কক্সবাজারটাইমসকে জানান, মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গা দেশের জন্য হুমকি হয়ে গেছে। এদের দ্রæত মিয়ানমার ফেরত পাঠানো জরুরী। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিকভাবে জোরালো তৎপরতা চালাচ্ছে। এবার কক্সবাজারের জনসভায় রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের দিক নির্দেশনা থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দ্রæত চালুর দাবি উঠেছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেও নানা জটিলতায় তা আটকে আছে।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল আলম চৌধুরী কক্সবাজারটাইমসকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। সোমবার ৩ টায় স্টেডিয়াম জনসভাস্থল কেন্দ্রিয় নেতাদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ওখানে প্রস্তুতির বিষয়ে অবহিত করা হবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আর কি কি দাবী জেলাবাসির পক্ষে জানানো হবে তাও পরিষ্কার করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

One response to “কক্সবাজারে ৩ লাখ কোটি টাকা উন্নয়নের মহাযজ্ঞে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও ১০ দাবি”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888