বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৮:১৭ অপরাহ্ন

সেই ওবায়দুল সহ ২৩ পাহাড় কর্তনকারীর নাম আদালতে

বিশেষ প্রতিবেদক : কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীতে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির সত্যতা পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গত ১ বছরে ১০ একর পাহাড় কেটে কমপক্ষে দেড় কোটি ঘন ফুট মাটি বিক্রি করেছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। পাহাড় কাটায় জড়িত ২৩ জনকে শনাক্ত করে নামের তালিকা ইতিমধ্যে আদালতেও পাঠিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর আগে পাহাড় কাটার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় আদালত স্বপ্রনোধিত আদেশ দেয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে পাহাড় কাটায় জড়িত ২৩ জনের মধ্যে বেশিভাগ পরিবেশ ও বন আইনের একাধিক মামলার আসামী উল্লেখ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। আদালতের পাশাপাশি প্রতিবেদনটি পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও ঢাকা কার্যালয়েও প্রেরণ করা হয়েছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের তাজমহলের ঘোনা, ঘোনারপাড়া, ছনখোলা ও পশ্চিম পাড়া এলাকায় সংঘবদ্ধ চক্র পাহাড় কেটে ডাম্পার ভর্তি করে বালি ও মাটি বিক্রি করে আসছে গত ১ বছর ধরে। এ বিষয়ে আগস্ট মাসের শুরুতে একাধিক গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যার প্রেক্ষিতে ১১ আগস্ট পাহাড় কাটায় জড়িতদের শনাক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন আদালত। ফলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয় বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। সরেজমিনে পরিদর্শন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে আলাপ করে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। যার একটি কপি সম্প্রতি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম, বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল জব্বার, বিট কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাহাড় কাটার এই সংবাদের সত্যতা মিলেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ্য রয়েছে। যে প্রতিবেদনটি পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত হয়ে আদালত সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রেরণ করা হয়।

পাহাড় কাটায় শনাক্ত ২৩ জনের প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বহুল আলোচিত ৩২ মামলার আসামি ওবায়দুল করিমকে। পিএমখালী ইউনিয়নের পরানিয়াপাড়ার সিরাজুল ইসলামের পুত্র এই ওবায়দুল করিম পুরো পাহাড় কাটা এবং ডাম্পার পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। পাহাড় কাটায় জড়িত অন্যান্যদের মধ্যে কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার নাছির উদ্দীন রুনো, খুরুশকুল তেতৈয়ার হেলাল উদ্দিন, পিএমখালীর আবদুল্লাহ, মাহমুদুল করিম, মো. মামুন, জাহাঙ্গীর আলম, মো. জোসেফ, তাজমহল, কায়েস সিকদার, রামুর খুনিয়াপালং এর নুরুল কবির বাবুল, পিএমখালীর লুৎফুর রহমান, সোনা আলী, মো. কাজল, মনিরুল ইসলাম মুন্না, খুরুশকুলের নাছির উদ্দিন, পিএমখালীর মো. সোহেল, মো. সিরাজ, শাহ জাহান, মো. হারুন, মোস্তাক আহমদ, নুরুল আমিন ও আবদুল কাদের।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৩ জন সহ অজ্ঞাত ১৫ জনের সিন্ডিকেটটি গত ১ বছরে ১০ একর সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে কমপক্ষে দেড় কোটি ঘন ফুট মাটি বিক্রি করেছে। ডাম্পার যোগে এসব মাটি অন্যত্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সাথে উক্ত সিন্ডিকেট সদস্যদের গোপন চুক্তি থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি গত এক বছরে। ফলে ১০ একর পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে আসছিল সিন্ডিকেটটি।

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ কক্সবাজারটাইমসকে জানান, ‘সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় এক প্রকার প্রকাশ্যে গত এক বছর জুড়ে একটি এলাকাতেই আনুমানিক ১০ একরের পাহাড় কেটে আনুমানিক দুই কোটি ঘনফুট বালি ও মাটি বিক্রি করেছে একটি সিন্ডিকেট। পাহাড় কাটার ঘটনায় সিন্ডিকেটটির বিরুদ্ধে সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা সোচ্চার হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে পাহাড় কাটা বন্ধের দাবি জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888