বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন

কাজ হারানো প্রবাসীদের জন্য কূটনৈতিক চেষ্টা চলছে: প্রধানমন্ত্রী

 বিডিনিউজ : করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসী কর্মীরা পরিস্থিতির উন্নতি হলে যেন আবারও কাজে যোগ দিতে পারেন, সেজন্য সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার জাতীয় সংসদে বেনজীর আহমেদের তারকাচিহ্নিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশি কর্মীরা যাতে মহামারী পরবর্তী সময়ে আবার নিয়োগ পেতে পারেন, সেজন্যে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার।

“এই অন্তবর্তী সময়ে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে আমরা দুঃস্থ ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসী কর্মীদের মাঝে প্রায় ১১ কোটি টাকার ওষুধ ও জরুরি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছি।”

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকদের এই সঙ্কটের মধ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক চাপ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই চাপ প্রশমিত করার জন্য আমাদের সরকার বিভিন্নমুখী কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে। কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে আমি কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছি।”

এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় যৌথভাবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রযোজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান।

সরকারের ‘খাদ্য ও চিকিৎসা কূটনীতির’ আওতায় বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ পাঠানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রতিবেশী অন্যান্য দেশে যেখানে লক্ষাধিক প্রবাসী শ্রমিক ফিরে এসেছেন, সেখানে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মাত্র ২২ হাজার প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন।”    

ফিরে আসা এই কর্মীদের টেকসই পুনর্বাসনের জন্য সরকার সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে এবং যথাযথ সহায়তা দেওয়ার জন্য ডেটাবেইজ করার উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “যারা পুনরায় বিদেশে যেতে সক্ষম, তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রবাসীদের বিদেশে চাকরি ধরে রাখা, নতুন নতুন পেশায় যোগদান, কৃষিক্ষেত্রে নিয়োগ, উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ফান্ড হবে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ফান্ডের অনুরূপ।”

মহামারীর মধ্যে চাকরিচ্যুত হয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে বিদেশ থেকে ফেরা কর্মীদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দের কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিদেশে প্রত্যাগত কর্মীদের এবং প্রবাসে করোনায় মৃত কর্মী পরিবারের উপযুক্ত সদস্যদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দিতে আমরা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছি।”

এ সংক্রান্ত নীতিমালা এরই মধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী শুধুমাত্র বৈধ ও নিবন্ধিত অভিবাসী কর্মীরা মারা গেলে পরিবারকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

“মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত নির্বিশেষে সকল প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য আমরা ৩ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে যাওয়া-আসার সুবিধার্থে ইতোমধ্যে কাতার এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, এয়ার এরাবিয়া ও এমিরেটসকে বাংলাদেশে নিয়মিত ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন।

এছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা-লন্ডন রুটে ফ্লাইট চালু করেছে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের আবেদনের প্রেক্ষিতে সীমিত পরিসরে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে বিমান চলাচলের অনুমতির বিষয়ে বেসরকারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকার কারণে বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে যাতে হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেজন্য এই মহামারীর মধ্যেও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে পাওয়া ২ লাখ ১৫ হাজার আবেদনের অধিকাংশ পাসপোর্ট মুদ্রণ করে বিদেশের বিভিন্ন মিশনে পাঠানোর কথা বলেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888