চোরাচালান ও হুন্ডি এখনও ‘বদি’সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়া অঞ্চলে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন আবদুর রহমান বদি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় গড়ে ওঠে অর্ধশত শক্তিশালী অবৈধ ব্যবসার সিন্ডিকেট, যার কেন্দ্রে ছিলেন স্বয়ং বদি। ইয়াবা, হুন্ডি, মানবপাচার এবং সীমান্ত পণ্য চোরাচালান সবই চলত এই ‘বদি’নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায়।

এটি কেবল মুখের কথা না, স্বয়ং আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ গোয়েন্দা সংস্থার করা একাধিক তালিকায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। যে সব তালিকায় ঘুরে-ফিরে আবদুর রহমান বদিকে প্রধান পৃষ্ঠাপোষক এবং গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রাম থেকে আবদুর রহমান বদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন। তবে মিয়ানমার কেন্দ্রিক চোরাচালন ও হুন্ডি এখনও তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সিন্ডিকেট সদস্যরা কৌশলে কারাবন্দি আবদুর রহমান বদি, বদি সিন্ডিকেটের প্রধান নিয়ন্ত্রক তারই ভাই কারাবন্দি মৌলভী মুজিবুর রহমান, আত্মগোপনে থাকা বদির ছেলে শাওন আরমানের সাথে যোগাযোগ করে সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদস্যরা এই অবৈধ ব্যবসা চলমান রেখেছে। এর জন্য সিন্ডিকেটের অনেক সদস্য রাতারাতি পাল্টিয়ে নিয়েছে রাজনৈতিক খোলস। যাদের অনেকেই এখন বিএনপি ও জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে সক্রিয় রয়েছেন।

সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থার একটি গোপন প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য। প্রতিবেদনটিতে দীর্ঘ ১৫বছর ধরে বদির নিকট বা বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত সীমান্ত উপজেলার ৩০জনের বেশি সিন্ডিকেট সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে। যদিও এই তালিকাটি আরও দীর্ঘ।

#হুন্ডি ও চোরাচালন নিয়ন্ত্রণে যারা :

বর্তমানে কারাগারে অবস্থান করলেও বদির হাতেই রয়েছে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের মুল কাজ। মিয়ানমার কেন্দ্রিক ইয়াবা, আইস, স্বর্ণসহ সকল চোরাই পণ্যের অর্থের লেনদেন হয়ে আসছে এই হুন্ডির মাধ্যমে। আবদুর রহমান বদি পরিচালিত দীর্ঘ ১৫ বছরের সিন্ডিকেট সদস্যের হাতেই রয়েছে এই অর্থ পাচারের মাধ্যম হুন্ডি। বদির বিশ্বস্ত সহযোগীরা দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থান করে এই নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছেন।

গোয়েন্দা তথ্য বলছে,গত ১৫ বছরের হুন্ডি সিন্ডিকেটের মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার মৃত মো. হোসেনের ছেলে জাফর আহমদ, যিনি টিটি জাফর নামে পরিচিত। সকলেই এবাক্যে টিটি জাফরকে বদির ব্যবসায়ী পার্টনার হিসেবে চিনেন। গত ৯ বছর ধরে টিটি জাফর তিনি আরব আমিরাত (দুবাইয়ে) অবস্থান করে বাংলাদেশে হুন্ডি লেনদেনের সিন্ডিকেটের প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে রয়েছেন।

সম্প্রতি টিটি জাফর দুবাই থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। যিনি চট্টগ্রামের কারাগারে থাকা বদির সাথে সাক্ষাত করেন এবং টেকনাফে অবস্থান করে সিন্ডিকেট সদস্যদের সাথে একাধিক বৈঠকও করেন।

গোয়েন্দা তথ্য, স্থানীয়দের দেয়া তথ্যের যাচাই করতে গিয়ে টেকনাফের উপরের বাজারের অগ্রনী ব্যাংক সংলগ্ন এলাকার নিউ মাকের্টে গিয়ে দেখা মিলে অভিজাত এবং সু-সজ্জিত একটি অফিসের। যেটিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী টিটি অফিস হিসেবে চিনেন। আর এই টিটি মানেই টাকা ট্রান্সপার বা হুন্ডি। যে কার্যালয়টির প্রধান জাফরের বড় ভাই টেকনাফ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মানিরুজ্জামান। যেখানে দায়িত্ব পালন করেন জাফরের শ্যালক কোরবান আলী ও সিরাজ মিয়া। আর টিটি জাফরের নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম শহরে আরও অফিস রয়েছে। যেটি পরিচালনা করেন তারই অন্যতম সহযোগি মো. ওসমান প্রকাশ হুন্ডি ওসমান এবং রমজান আলী। মুলত মিয়ানমার কেন্দ্রিক অর্থ পাচারের ৫০শতাংশের বেশি রয়েছে এই সিন্ডিকেটটির নিয়ন্ত্রণে।

এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে সাবেক কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানের সাথে।তিনি বলেন,‘আমি এলাকার জনপ্রিয় কাউন্সিলর। অনেকেই আমার ওযার্ড থেকে জনপ্রতিনিধি হতে চান। তাদেরই কেউ কেউ আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে আমি ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটান। তেমনি একটি কুৎসা বদির সাথে আমার ভাইয়ের ব্যবসা রয়েছে। আর আমি সেই ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করি। এর চেয়ে বড় মিথ্যাচার আর হতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন,‘বদির আক্রোশের শিকার হয়ে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে আমার ভাই জাফর ২০১৬ সালে দুবাই পাড়ি জমান। তখন থেকে আর কখনো দেশে আসেনি। এমনকি তার মা ও তার দুই ভাই মারা গেলেও তিনি দেশে ফিরতে পারেন না। যার অত্যাচারের ভয়ে মা ও ভাইয়ের মৃত্যুতে জাফর দেশে আসেনি। আর সেই জাফর অত্যাচারী বদির সাথে হাত মেলাবে এটা কিভাবে ভাবলেন ?’

কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান বলেন, জাফরের বৌয়ের বড় ভাই সিরাজ মিয়া ও ছোট ভাই কোরবান আলী। তাদের সঙ্গে জাফরের কোনো ব্যবসায়িক সর্ম্পক আছে কিনা আমি জানি না।

রমজান আলী ও ওসমানের বিষয়ে কাউন্সিলর বলেন,‘ডেইলপাড়ার রমজান আলীর বাবার আদি নিবাস মিয়ানমারে। একসময় এ পরিবারটি মিয়ানমারের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করত। কিন্তু ২০১২সালে বদি ক্ষমতায় আসার পর বদির অত্যাচারে রমজান আলী টেকনাফ ছেড়ে চট্টগ্রামে পাড়ি জমান। সেই থেকে তিনি সেখানে আছেন। ওসমান আমার দূর সম্পর্কের ফুফাত ভাই। তবে তিনি এমপি বদির বডিগার্ড ফরিদের ছোট ভাই। ওই ক্ষমতাকে ব্যবহার করে তারা একসময় টেকনাফে অনেককিছুই নিয়ন্ত্রন করত। তবে ৫আগষ্টের পর তিনি চট্টগ্রামে চলে গেছেন। দুই জনের আমাদের কোন ব্যবসা নেই।’

এই হুন্ডি ব্যবসায় বদির পারিবারিক আধিপত্যে গড়ে ওঠা অন্যতম সদস্য ওমর ফারুক, যিনি সিআইপি ফারুক নামে পরিচিত। তিনি বদির সৎ বোনের জামাই এবং বর্তমানে চট্টগ্রাম শহর থেকে পরিচালনা করছেন হুন্ডি ও ইয়াবা পাচারের কাজ। চট্টগ্রাম শহরে অবস্থানকারি ফারুক নিয়মিত কারাগারে বদির সাথে সাক্ষাত করতে যান। বদি নিদের্শনায় পরিচালনা করেন অবৈধ ব্যবসা।

সূত্র জানায়, তার অধীনে টেকনাফে কাজ করছে কমপক্ষে ২০জন সদস্য। ফারুকের ভাই পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর হাফেজ এনামুল হাসান টেকনাফে অবস্থান করে এই ২০ জনকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এক সময় বদি ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত এনামুল হাসান সরকার পতনের পর থেকে টেকনাফ পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। হয়েছেন আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদ টেকনাফ উপজেলা শাখার যুগ্ম আহবায়কও।

এ ব্যাপারে ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ ফোন রিসিভ করেননি। দেননি ক্ষুব্দে বার্তার উত্তরও। তার ভাই এনামুল হাসানের সাথে যোগাযোগা করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন এবং পরে কথা বলবে বলে জানান। তিনি এরপর ফোন ধরেননি। দেননি ক্ষুব্দেবার্তার উত্তরও।

সিআইপি ফারুকের আরেক সিন্ডিকেটের প্রধান কুলালপাড়ার জাহাঙ্গীর আলম। তার চক্রের আরেক হোতা রকিবুল হাসান ও আবদুর রহমান নামের দুইভাই। দুই জনেরই ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীর। বোন বিয়ে করে বিনা বাধায় হুন্ডি ব্যবসার রাজত্ত্ব করছেন দুইজনকে ব্যবহার করে। জাহাঙ্গীর একটি সিএন্ডএফে অল্প বেতনের চাকুরি করলেও বর্তমানের কুলালপাড়া ও কলেজপাড়ায় অঢল সম্পদের মালিক বনের গেছে। জাহাঙ্গীরের যাবতীয় কাজ করেন রকিবুল হাসান ও আবদুর রহমান। দুইজনই টেকনাফ বড় মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় একটি ফার্মেসীতে বসে হুন্ডি ব্যবসা পরিচালনা করেন। যে ফার্মেসীতে গিয়ে অল্পসংখ্যক ওষুধ দেখা গেলেও তার সব মেয়াদোত্তীর্ণ। এরমধ্যে হুন্ডি ব্যবসায় আবদুর রহমান একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছেন।

রকিবুল হাসান বলেন, ‘আমি ১৯৯৭সালে টেকনাফ স্বপরিবারে সৌদি আরব পাড়ি জমায়। সেখানে থেকে ফিরেছি গেল বছরের আগষ্টের পরে। তাই আপনার তথ্যে কোথাও কোন ভুল আছে। আপনি যে রকিবের কথা বলছেন আমি সেই জন নয়। বদি বা ফারুকের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই আমি আপনাকে এটা নিশ্চিত করছি। আর জাহাঙ্গীরের সাথে কোন ব্যবসা নেই আমার।’

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি কোন অবৈধ ব্যবসায় জড়িত না। বদি বা তাদের সংশ্লিষ্ট কারও সাথে আমার ব্যবসা নেই। রকিবুল বা আবদুর রহমানের সাথেও কোন ব্যবসা নেই।’

বদি ছায়ায় আরও অনেকে হুন্ডির সাথে জড়িত ছিলেন যারা এখনও সক্রিয় রয়েছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সত্যতা মিলেছে। যারা বিভিন্ন স্থানে অফিস খুলে চালিয়ে যাচ্ছেন হুন্ডির ব্যবসা। এরমধ্যে অন্যতম ডেইলপাড়া এলাকার ইসরাইল মোহাম্মদ আলীর ছেলে আবদুর হাই, জালিয়াপাড়ার নুর হোসেনের ছেলে মো ইয়াসিন, টেকনাফ জালিয়াপাড়ার ইসমাঈলের ছেলে মো ইব্রাহিম, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার মৃত খুইল্যা মিয়ার ছেলে আমির আলী ওরফে বর্মাইয়া আলী, চট্টগ্রামে অবস্থানরত নাইট্যংপাড়া আবু বক্কর, আবুল ফয়েজ, শীলবুনিয়াপাড়ার মো. রশিদের ছেলে আয়াছ ওরফে বর্মাইয়া আয়াছ, তার ছোট ভাই মো. ইয়াছের ওরফে বার্মাইয়া ইয়াছের, শীলবুনিয়াপাড়ার মো. দেলোয়ার, মো. শফিক, মো. শামসু, সৌদি আরবে অবস্থানরত নতুনপল্লানপাড়া আব্দুল খালেক, নতুন পল্লানপাড়ার উলা মিয়ার ছেলে শফিক উল্লাহ ও অলিয়াবাদের ডালিম (এবি ব্যাংকের নিচের বিকাশের দোকানদার) ।

এছাড়া কেরুণতলী, লেঙ্গুবিল, অলিয়াবাদ এবং উত্তর লম্বরী এলাকার আরও অন্তত ১০-১২জন স্থানীয় যুবক রয়েছেন যারা বদির পরিবারের সদস্যদের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর। যারা সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা, আইস, স্বর্ণ চোরাই পথে বাংলাদেশে আনেন আর মিয়ানমারের সার, সিমেন্ট সহ খাদ্য পণ্য পাচার করেন।

বদির ছেলে শাওন আরমান বর্তমানে আত্মগোপনে থাকলে তার অধিনের ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছেন উত্তর জালিয়াপাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা ফরিদ আলম। বদির ভাই কারাবন্দি মৌলভী মুজিবুর রহমানের দায়িত্বে রয়েছে ছৈয়দ আলম। যিনি ফরিদ আলমের ভাই এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। এই দুই ভাই বহুল আলোচিত নাফনদীর নদীর চৌধুরী পাড়াস্থ বদির গুদাম নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। যে গুদাম থেকে মিয়ানমারে পন্য পাচারের জন্য মজুদ রাখা, ট্রলারে তুলে দেয়ার কাজ পরিচালনা হয়ে থাকে। এরমধ্যে দুই ভাই কারাগারে মৌলভী মুজিবের সাথে দেখা করার তথ্যও মিলেছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির ৭ নং ওয়ার্ড সভাপতি ছৈয়দ আলম বলেন, ‘আমার সাথে বদির রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। তাই তাঁর সাথে এক হয়ে কাজ করার প্রশ্নই উঠে না। সামনে দলের নতুন কমিটি গঠিত হবে। এজন্য একটি মহল আমাকে রাজনৈতিকভাবে কোনাঠাসা করতে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। মুলত যে গুদামের কথা বলা হচ্ছে, তা আমি বদির কাছ থেকে ভাড়া নেইনি। জায়গার মালিক হচ্ছে এজাহার মিয়ার (বদির বাবা) ওয়ারিশগন। আমি সেই ওয়ারিশের থেকে জায়গা ভাড়া নিয়েছি।’

ছৈয়দ আলমের ভাই একই ওয়ার্ডের বিএনপির সহসভাপতি ফরিদ আলম বলেন,‘একটি কুচক্রি মহল আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। দীর্ঘ ১৭ বছর বদি ও তার দোসররা আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করেছে। আর সেই বদির সাথে আমার ব্যবসা এটা পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়।’

দুইজনই কারাগারে বদির ভাইয়ের সাথে দেখা করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, টেকনাফ-মিয়ানমার সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরেই মাদক পাচারের হটস্পট হিসেবে পরিচিত। ভৌগোলিক অবস্থান, দুর্বল সীমান্ত নিরাপত্তা, এবং স্থানীয় প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যের সহায়তায় এই এলাকা মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। নতুন করে সরকার পরিবর্তনের সুযোগে সিন্ডিকেটটি নতুন করে সংগঠিত হয়ে আরও পরিকল্পিতভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক রঙে রক্ষা চক্র সিন্ডিকেটের বর্তমান কাঠামো কিছুটা পাল্টে গেলেও বদির অনুগতরাই এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে।

#আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যা বললেন :

একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা জানি কারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু রাজনৈতিক চাপ, স্থানীয় প্রতিরোধ এবং প্রমাণের ঘাটতির কারণে আমরা তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে পারছি না।”

কক্সবাজারের জেলা পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ট্রাফিক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন সময় হুন্ডি কারাবারিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারও করা হয়েছে অনেককে। কিন্তু পরে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের একই কারবারে জড়িয়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে নজরধারী করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. আশিকুর রহমান জানান, সীমান্তের সুরক্ষার পাশাপাশি মাদক পাচার ও চোরাচালন প্রতিরোধে বিজিবি সর্বোচ্চ নজরধারীর মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। মাদক ও চোরাচালনের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচারের তথ্য রয়েছে। জড়িতদের চিহ্নিত করতে বিজিবি মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

nupa alam

Recent Posts

চকরিয়ায় বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের যাত্রা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক : বেসরকারী উদ্যোগে ডেনমার্ক ও বাংলাদেশীর যৌথ মালিকানায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় বিশ্বমানের একেএস ডায়াগনস্টিক…

8 hours ago

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার দাবিতে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের অন্যতম ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনার সাক্ষী। কক্সবাজার দেশের প্রধান…

10 hours ago

ইকরামুল হাসান শাকিল কক্সবাজার থেকে এভারেস্টে

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার থেকে পায়ে হেঁটে গিয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন…

1 day ago

নাফনদীর অবশিষ্ট অংশে মাছ ধরার অনুমতির দাবিতে জেলেদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের নাফনদীর অবশিষ্ট অংশেও মাছ ধরার অনুমতি প্রদানের দাবিতে মানববন্ধন করেছে জেলেরা।…

1 day ago

মাদক কারবারীদের সঙ্গে কোস্টগার্ডের গোলাগুলিতে আহত ১, ইয়াবা ও বিদেশি পিস্তলসহ আটক ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় মাদক কারবারিদের সঙ্গে কোস্টগার্ডের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময়…

1 day ago

সড়কে ৩ জনের প্রাণহানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : চকরিয়া ও ‍উখিয়ায় পৃথক ৩ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।…

1 day ago