কক্সবাজার জেলা

অবশেষে জলবায়ূ উদ্বাস্তু আশ্রয়ন প্রকল্পে চালু হল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

নুপা আলম : অবশেষে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবায়ূ উদ্বাস্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প কক্সবাজারের খুরুশকুলের বাঁকখালী নদীর তীরে চালু হয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বুধবার থেকে অস্থায়ীভাবে চালু হওয়া এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে স্বল্প পরিসরে পাঠ্যদান শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে।

এটি দেশের প্রথম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যা আশ্রয়ন প্রকল্প চালু হল। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নিদের্শনায় দ্রæত সময়ের মধ্যে এই বিদ্যালয়টি চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ।

তিনি জানান, খুরুশকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের ভিত্তিতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য তৈরি করা হয় বিশেষ এই আশ্রয়ন প্রকল্পটি। ২০২০ সালের ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করেন। যেখানে ১৯ টি ভবনে ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন ৬ শত পরিবারের ৪ হাজার মানুস। যেখানে আরও ৬০ টি ভবন নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। আগামি ২ মাসের মধ্যে এখানে আরও কয়েক শত পরিবারের আড়াই থেকে ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় পাবেন। প্রকল্প এলাকাটির আশে-পাশের ৩ কিলোমিটার এলাকায় কোনপ্রকার প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। যার কারণে এখানে আশ্রয় নেয়া শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দৃশ্য গোচর হওয়ার পর ১৫ অক্টোবরের মধ্যে আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিদের্শনা দেন। নিদের্শনার প্রেক্ষিতে ১১ অক্টোবর অস্থায়ীভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চালু করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, প্রকল্প এলাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কমিউনিটি ক্লিনিক করার জন্য জমি খালি রয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারি সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রকল্প এলাকার সাইক্লোন সেন্টারটি অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া গেছে। ওই সাইক্লোন সেন্টারে অস্থায়ীভাবে চালু করা হল প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। যেখানে ইতিমধ্যে ৫০ জন শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে। একজন প্রধান শিক্ষক সহ ৫ জন পদায়ন করে বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরু হয়েছে। জামালপুর থেকে বিদ্যালয়ের জন্য বেঞ্চ সহ নানা উপকরণ আনা হয়েছে। এখানে আশ্রয়ন প্রকল্পের পরিবারের শিশু ছাড়াও আশে-পাশের এলাকার শিশুদের ডিসেম্বরে ভর্তি করানো হবে।

খুরুশকুল জলবায়ু উদ্বাস্তু পূর্ণবাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের এই প্রতিষ্ঠানটি অস্থায়ীভাবে চালু হলেও দ্রæত সময়ের মধ্যে ভবন নিমার্ণ সহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। তিনি জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে ৬ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নিমার্ণের কাজ দ্রæত শুরু করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেবেন। এটি একটি দৃষ্টি নন্দন, আধুনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় হবে বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার খুরুশকুল আশ্রয়ন প্রকল্পের সাইক্লোন সেন্টারে গিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদানের দৃশ্যটি দেখা গেছে। যেখানে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা।

বিদ্যালয়টি দ্রæত সময়ের মধ্যে চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন জানান, প্রকল্প এলাকায় প্রাথমিক জরিপের পর অল্প সংখ্যাক শিশুদের এনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এলাকাটিতে পরিচালিত জরিপে ভর্তি উপযোগি ৩ শতাধিক শিশু পাওয়া গেছে। এটা আরও বাড়তে পারে। এই বিদ্যালয়ে আধুনিকমানের করতে আন্তরিক চেষ্টার কথা বলেন তিনি।

তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী শাহাব উদ্দিনের মা ফাতেমা বেগম বলেন, তাদের আদি নিবাস কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল এলাকায়। বিগত ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড়ে তারা ভিটে মাটি হারিয়ে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়ায় সরকারি খাস জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে রূপান্তর করার কাজে তাদের আশ্রয়ে ঠিকানাও অধিগ্রহণ করে সরকার। পরে খুরুশকূল আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরকার তাদের মাথাগোঁজার ব্যবস্থা করেছেন।

তিনি বলেন, “আশ্রয়ণ প্রকল্পে আমাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই হলেও আশপাশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় সন্তানদের পড়ালেখার সুযোগ ছিল না। তাছাড়া প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে লেখাপড়া ছিল কষ্টকর ব্যাপার। এ কারণে স্কুলগমণ উপযোগী অনেক শিশু পড়ালেখা থেকে ঝড়ে পড়ার ঝুঁকিতে ছিল। এখন সরকারি উদ্যোগে স্কুল প্রতিষ্ঠা হওয়ায় সেই আশংকা দূর হয়েছে।”

দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী আব্দুর রহিমের মা বিলকিস আক্তার বলেন, তার স্বামী দিনমজুর। আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে তার ছেলের পড়ালেখা করা ছিল খুবই কষ্টকর ছিল। এ কারণে তার ছেলের পড়ালেখা বন্ধ ছিল। প্রকল্প এলাকায় সরকারিভাবে স্কুল চালু হওয়ায় তার ছেলেকে ভর্তি করে দিয়েছেন। এখন অন্য শিশুদের মত তার ছেলেও পড়ালেখা করতে পারবে।

প্রসঙ্গত, খুরুশকুল জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকার কারণে যেখানে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সরকার চালু করে শিখন কেন্দ্র নামের ১০ টি কেন্দ্র। সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা- স্কাসের অধিনে ওই সব কেন্দ্রে ৩ শত শিশুকে পাঠদান করা হত। এব্যাপারে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে দৃষ্টিগোচর হলে গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জলবায়ূ উদ্বাস্তু আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসেন। ওই সময় তিনি দ্রæত সময়ের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

nupa alam

Recent Posts

শান্তিপূর্ণভাবে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন

ফয়সাল উদ্দিন রিপন : বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ৮মে…

2 weeks ago

ঈদের মোনাজাতে রোহিঙ্গাদের কান্না; স্বদেশ ফেরতের আকুতি

বিশেষ প্রতিবেদক : ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮ লাখ…

1 month ago

‘সংক্ষুদ্ধ হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মতে’ বন কর্মকর্তাকে হত্যা : পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড় কেটে সংঘবদ্ধ মাটির পাচারকারি চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার…

1 month ago

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ : সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ, এপারে কম্পন

টেকনাফ প্রতিবেদক : সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির চলমান…

1 month ago

কক্সবাজার পৌরসভায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার পৌরসভাকে প্লাস্টিক বর্জ্য মুক্ত করতে উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সাথে যৌথভাবে কাজ…

1 month ago

কক্সবাজারে বিদ্যুৎ নিয়ে সু-খবর

বিশেষ প্রতিবেদক : কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও খুরুশকুল বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে…

1 month ago