এক্সক্লুসিভ

এইচএসসি : ৫ শিক্ষকের ৬ শিক্ষার্থী, সকলেই ফেল

বিশেষ প্রতিবেদক : কক্সবাজারের উখিয়া ডিগ্রী কলেজ, যে কলেজটিতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ৫ জন। আর এবার এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছিল ৬ শিক্ষার্থী। যে ৬ শিক্ষার্থীর কেউ পাস করতে পারেননি। শুধু তাই নয় কলেজটি সার্বিকভাবে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। যেখান থেকে পাস করেছে মাত্র ৩০ দশমিক ১৮ শতাংশ।

আর এই ফলাফল বিপর্যয় নিয়ে জেলা জুড়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।

উখিয়া ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অজিত দাশ ফলাফল বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে লজ্জিত বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা কলেজে অনুপস্থিত, ক্লাসে পাঠদানে অংশগ্রহণ না করা ও সর্বোপুরি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি করার কারণে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি জানান, ৫৭০ জন পরিক্ষার্থীদের মাঝে অকৃতকার্য হয়েছে ৩৯৮ জন এবং পাশ করেছেন মাত্র ১৭২ জন। পাশের হার ৩০ দশমিক ১৮ শতাংশ। মানবিক বিভাগ থেকে পাশ করেছে ১৪০ জন, ফেল করেছে ৩৩৬ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পাশ করেছে ৩২ জন, ফেল করেছে ৭০ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৬ জন অংশ নিয়ে কেউ পাশ করেনি।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরো জানান, সাধারণে খারাপ করলেও ৮৪ জন কারিগরি শিক্ষা পরীক্ষা অংশ গ্রহণ করে শত ভাগ পাশ করেছে। তার মতে, সাধারণ ও কারিগরি শাখায় মোট পাশের হার ৩৯.৫৪।

তবে বিষয়টি মানতে রাজী নন স্থানীয় সচেতন মহল। উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, যেসব শিক্ষার্থী এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তারা কেউ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকুরি করার তথ্য পাওয়া যায়নি। এখানে ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে শিক্ষাদানে শিক্ষকের অবহেলা, বর্তমান সিলেবাস সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা না থাকা, শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার অনীহা কাজ করছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে চিন্তা করার পরামর্শ দেন তিনি।

উখিয়ার শিক্ষাবিদ আদিল চৌধুরী জানান. কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা, সঠিক পরিচালনা ও শিক্ষকদের জবাবদিহিতা না থাকায় ফলাফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। এর বড় উদাহরণ হচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগে ৫ জন শিক্ষক থাকার পরও ৬ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে অংশগ্রহণ করে সবাই ফেল করেছে। এরা কি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আদৌ কাজ করেছিল। নাকি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অযোগ্যতা প্রমাণ করে।

উখিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রতন কান্তি দে জানান, ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে কলেজে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের প্রতি অভিভাবকদের আরও নজরদারি বৃদ্ধি এবং শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের এনজিওর চাকরি বিষয়ে যেসব মন্তব্য করা হচ্ছে তা যুক্তিযুক্ত নয় দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমানে এসএসসি পাশ কোনো ছেলেকে চাকরি দেওয়ার সুযোগ নেই। কমপক্ষে এইচএসসি পাশ করতে হয়। পাশ না করার আগে এনজিও কে দোষারোপ করা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করছেন তিনি।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। এবার ৭১০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে।

nupa alam

Recent Posts

শান্তিপূর্ণভাবে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন

ফয়সাল উদ্দিন রিপন : বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ৮মে…

2 weeks ago

ঈদের মোনাজাতে রোহিঙ্গাদের কান্না; স্বদেশ ফেরতের আকুতি

বিশেষ প্রতিবেদক : ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮ লাখ…

1 month ago

‘সংক্ষুদ্ধ হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মতে’ বন কর্মকর্তাকে হত্যা : পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড় কেটে সংঘবদ্ধ মাটির পাচারকারি চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার…

1 month ago

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ : সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ, এপারে কম্পন

টেকনাফ প্রতিবেদক : সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির চলমান…

1 month ago

কক্সবাজার পৌরসভায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার পৌরসভাকে প্লাস্টিক বর্জ্য মুক্ত করতে উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সাথে যৌথভাবে কাজ…

1 month ago

কক্সবাজারে বিদ্যুৎ নিয়ে সু-খবর

বিশেষ প্রতিবেদক : কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও খুরুশকুল বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে…

1 month ago