জাতীয়

শুভ জন্মদিন শেখ হাসিনা

জাতীয় ডেস্ক ঃ শুভ্র শরতের ৪৩তম দিন আজ। ইংরেজি মাসের ২৮ সেপ্টেম্বর। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন। একদিকে স্বাধীনতা, অন্যদিকে ভারতভাগের ক্ষত, সেই ক্রান্তিকালে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ঘরে জন্ম নেন তাঁদের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। যাকে বাড়ির সবাই আদর করে ডাকতেন হাসু। বাবা-মায়ের আদরের সেই হাসু নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে হয়ে উঠেছেন বাঙালি জাতির আস্থার প্রতীক। 

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের দুঃসময়ের পর ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে দলকে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করেছেন তিনি। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে এর পরের মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে না পারলেও ২০০৮ সাল থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন শেখ হাসিনা। 

টুঙ্গিপাড়া থেকে জাতীয় সংসদ আর গণভবনে আসার এই দীর্ঘ পথপরিক্রমা মোটেও সহজ ছিল না। জীবনের ওপর আঘাত এসেছে বারবার। কিন্তু দমে যাননি তিনি। জাতিকে দেওয়া ওয়াদা পূরণ করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার করে রায় কার্যকর করেছেন। একই সঙ্গে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। দৃঢ় ও সাহসী নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে দেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সফল এই রাষ্ট্রনায়ক এখন বিশ্বে নেতৃত্বের রোল মডেল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা পিতার আদর্শ, দেশপ্রেম আর ত্যাগের ব্রত নিয়ে কাজ করছেন বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা উন্নত করতে। যোগ্য নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন উন্নয়নের পথ ধরে। তিনি এখন বদলে যাওয়া বাংলাদেশের রূপকার। সংকটে-সংগ্রামে বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল। 

শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি নিয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন নিউইয়র্কে। তার অনুপস্থিতিতেই দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপন করবে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-আলোচনা সভা, আনন্দ শোভাযাত্রা, দোয়া-মিলাদ অনুষ্ঠান, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী।

বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান মধুমতী নদীবিধৌত তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রাম। এই নিভৃত পল্লীতে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। শৈশব-কৈশোর কেটেছে টুঙ্গিপাড়ার বাইগার নদীর তীরে চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে, দাদা-দাদির কোলে-পিঠে। পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে বন্দি, রাজরোষ আর জেল-জুলুম ছিল বঙ্গবন্ধুর নিত্যসহচর। রাজনৈতিক আন্দোলন এবং রাজনীতি নিয়েই শেখ মুজিবুর রহমানের দিনরাত্রি, যাপিত জীবন। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে ব্যস্ত পিতার দেখা শেখ হাসিনা পেতেন কদাচিৎ। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শেখ হাসিনা ছিলেন জ্যেষ্ঠ। তাঁর অন্যান্য ভাই-বোন হলেন-শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। শেখ হাসিনা গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গেই বেড়ে উঠেছেন। গ্রামের সঙ্গে তাই তাঁর নিবিড় সম্পর্ক।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি নিজের পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। পুরান ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত হলে আবাস স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর। এ সময় শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশীবাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভানেত্রী (ভিপি) নির্বাচিত হন। একই বছর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই শেখ হাসিনার রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬-দফা দাবিতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। শুরু হয় প্রচণ্ড দমন-নিপীড়ন। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দায়ের করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। এই ঝড়ো দিনগুলোতেই কারাবন্দি পিতার আগ্রহে ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় বাঙালি জাতির ১১-দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যায়, তখন বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি মুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল জš§ নেন। ১৯৭৩ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হন। এ সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক কাউন্সিল অধিবেশনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক জান্তা, স্বৈরশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে চলে একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনোকিছুই তাঁকে টলাতে পারেনি একবিন্দু। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের পর তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথম সরকার গঠন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি বিরোধী দলের নেতা হন। পরে ২০০৮ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১৪ সালে তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।

সহজ-সারল্যে ভরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। মেধা-মনন, সততা, কঠোর পরিশ্রম, সাহস, ধৈর্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠেছে তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। পোশাকে-আশাকে, জীবনযাত্রায় কোথাও কোনো বিলাসিতা বা কৃত্রিমতার ছাপ নেই। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ও ধার্মিক। ফজরের নামাজ ও কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে তাঁর দিনের সূচনা ঘটে। পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন কয়েকবার।

nupa alam

Recent Posts

ঈদের মোনাজাতে রোহিঙ্গাদের কান্না; স্বদেশ ফেরতের আকুতি

বিশেষ প্রতিবেদক : ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮ লাখ…

3 weeks ago

‘সংক্ষুদ্ধ হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মতে’ বন কর্মকর্তাকে হত্যা : পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড় কেটে সংঘবদ্ধ মাটির পাচারকারি চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার…

3 weeks ago

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ : সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ, এপারে কম্পন

টেকনাফ প্রতিবেদক : সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির চলমান…

3 weeks ago

কক্সবাজার পৌরসভায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার পৌরসভাকে প্লাস্টিক বর্জ্য মুক্ত করতে উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সাথে যৌথভাবে কাজ…

3 weeks ago

কক্সবাজারে বিদ্যুৎ নিয়ে সু-খবর

বিশেষ প্রতিবেদক : কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও খুরুশকুল বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে…

3 weeks ago

রামুতে ড্রাম্প ট্রাক উল্টে চালকের মৃত্যু

রামু প্রতিবেদক : রামুতে ড্রাম্প ট্রাক উল্টে চালকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত ২ টার…

4 weeks ago