বিশেষ প্রতিবেদক : বছরব্যাপী আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনার এক বছরে মামলার অগ্রগতি নিয়ে বাদী ও তার আইনজীবীরা সন্তুষ্ঠি প্রকাশ করলেও আসামীপক্ষের আইনজীবীর দাবি এজাহার আর অভিযোপত্রে নানা অসঙ্গতি রয়েছে এবং তা বিবেচনায় সুষ্ঠু ন্যায়-বিচারের।
এ ঘটনায় দায়ের মামলাটি এখন আদালতে স্বাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। গত ২৬ থেকে ২৮ জুলাই স্বাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে লকডাউন থাকায় তা অনুষ্ঠিত হয়নি। মামলার ১৫ জন আসামী কারাগারে রয়েছে। এতে স্বাক্ষী করা হয়েছে ৮৩ জনকে।
ঘটনার গত এক বছরে মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ঠি প্রকাশ করলেও চুড়ান্ত রায়ে আসামীরা দন্ডপ্রাপ্ত হলে সেটা পরিপূর্ণতা পাবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।
শারমিন বলেন, “সন্তুষ্ঠ বিষয়টা খুব ছোট, এটি আসলে অনেক বড় একটা ব্যাপার। পরিবারের সদস্য হিসেবে চাই, বিচারটা যেন সুষ্ঠুভাবে হয়। যারা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল, তাদের যেন ক্যাপিটাল পানিস্টমেন্ট (সর্বোচ্চ সাজা) হয়। ”
“ যেদিন এই মামলার রায় হবে, তাদের (হত্যাকান্ডে জড়িতদের) ক্যাপিটাল পানিস্টমেন্ট হবে। একই সঙ্গে রায় যখন কার্যকর হবে আসলে তখনই আমরা বলতে পারি যে, আমরা সন্তুষ্ঠ। সেইদিনই বলতে পারব যে আমরা সন্তুষ্ঠ। ”
মামলার সার্বিক দিক নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাদী বলেন, “ মামলাটা যেদিন শুরু হয়েছে, তদন্তকারি সংস্থার সংশ্লিষ্টরা অনেক অনেক পরিশ্রম করেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অনেক ধন্যবাদ জানাই। এত অল্প সময়ের মধ্যে এত ক্রিটিক্যাল একটা বিষয়ে কাজ করে সাড়ে তিনমাসে উনারা (তদন্ত সংস্থা ) ভাল একটা চার্জশীট দিয়েছেন। সেই পর্যন্ত বলা যায় আমরা খুশি হয়েছি। ”
“ তারপর থেকে প্রায় ৮ মাস গত হলেও বিচারকাজ আসলে যে গতিতে হওয়ার কথা ছিল ওইভাবে শুরু হয়নি বলা যায়। ট্রায়াল বলতে যেটা বুঝায়, আদালতের ট্রায়াল, স্বাক্ষীরা আসা, তাদের (স্বাক্ষী) সঙ্গে কথা বলা; সেই কাজটা তো আসলে এখনো শুরু হয়নি। মূলত: করোনা মহামারি ও লকডাউনের কারণে তো বিচার কাজটা শুরু হয়নি। ”
যখনই বিচার কাজটা আসলে শুরু হবে, তখনই সেটা কিভাবে এগুচ্ছে; ও্টা দেখে আসলে আসলে বলতে পারবেন পরিবারের স্বজনদের সন্তুষ্ঠির জায়গাটা কোথায় আছে, এমন মন্তব্য করেন নিহত সিনহার বোন শারমিন।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যার ঘটনাটি খুবই চাঞ্চল্যকর এবং পুরো বাংলাদেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছে বলে মন্তব্য করে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা।
মোস্তফা বলেন, এটি অনেক বড় মানের মামলা। এটা প্রমানের জন্য স্বাক্ষ্য দাঁড় করাতে তদন্তকারি কর্মকর্তাকে অনেক জায়গায় যেতে হয়েছে। অনেক কষ্টে ৮৩ জন স্বাক্ষী নিয়ে মামলাটি স্বাক্ষ্যগ্রহণের জন্য চার্জশীট প্রস্তুত করেছেন। মামলাটি এখন বিচারাধীন রয়েছে। গত ২৬ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত স্বাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে তা অনুষ্ঠিত হয়নি।
“ বড় কথা হল, এ ধরণের চাঞ্চল্যকর মামলা এতো তাড়াতাড়ি বিচারের জন্য সহজে যায় না। অনেক বাধা-বিপত্তি আসতে থাকে, এগুলো পার হয়ে যেতে হয়। তারপরও তদন্তকারি কর্মকর্তার অনেক ধর্য্য ও কষ্টে এটি এখন বিচারের পর্যায়ে রয়েছে। ”
কিন্তু করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে মামলার স্বাভাবিক গতি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাদীর এ আইনজীবী।
মোস্তফা বলেন, “ যদি মামলাটি স্বাভাবিক সময়ের মত যথাযথ প্রক্রিয়ায় স্বাক্ষীগ্রহণ করা সম্ভব হত তাহলে অতিসত্ত্বর শেষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সেটার জন্য বিপত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ”
“ তবে আমাদের বিশ্বাস, এই খুনের বিচার অবশ্যই হবে। যখন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে, তখনই আদালতে মামলাটি স্বাভাবিক গতি পাবে। মামলার ৮৩ জন স্বাক্ষী রয়েছে, অপরাধীদের দোষী প্রমানের জন্য সবার স্বাক্ষ্যগ্রহণের প্রয়োজন নেই। এদের মধ্যে যাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হবে আদালতে তাদেরই স্বাক্ষ্যগ্রহণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ”
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে এই বছরের মধ্যেই মামলাটি চুড়ান্ত রায়ের দিকে নেয়া সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন বাদীর এই আইনজীবী।
“ মামলাটা স্বাক্ষ্য নির্ভর, স্বাক্ষী যদি বলে আমার সামনে অমুক আসামী, অমুক কাজ করেছে। লিয়াকত গুলি মেরেছে, প্রদীপ পা দিয়ে সিনহাকে গলা টিপে ও মাথা চেপে ধরে শেষ নি:শ্বাস যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে; এগুলো যদি প্রমান করা যায় তাহলে যারা যা করেছে, সেভাবেই শাস্তি হবে। ”
মোস্তফা বলেন, “ যে কিলার হবে রায়ে তার মৃত্যুদন্ডের সাজা হবে। এছাড়া যে যতটুকু অপরাধের সঙ্গে সংযুক্ত আইন অনুযায়ী সে ততটুকু অপরাধের জন্য শাস্তি পাবে। ”
তবে আদালতে মামলার গতি প্রক্রিয়া নিয়ে ন্যায়-বিচার নিশ্চিত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বলে মন্তব্য করেন এ আইনজীবী।
এদিকে কথিত সিনহা হত্যাকান্ডের সাথে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কোন ধরণের সংশ্রব ও সংশ্লিষ্টতা ছিল না দাবি করে আসামীপক্ষের আইনজীবী রানা দাশগ্রপ্ত বলেন, “ এজাহার ও অভিযোগপত্রে এতদসংক্রান্ত বর্ণনায় যে অসঙ্গতি এবং পরস্পর বিরোধী উক্তি রয়েছে। ”
“ তা থেকে সুষ্পষ্টভাবে প্রতিভাত হচ্ছে যে, মাদক চোরাচালান, মানবপাচার ও ডাকাতির বিরুদ্ধে সরকারের যে জিরো ট্রলারেন্সের যে সিদ্ধান্ত টেকনাফ থানার ওসি থাকাকালীন প্রদীপ তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই কারণে একটি বিশেষ স্বার্থন্বেষী মহল তার (ওসি প্রদীপ ) উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিল। ”
আসামীর এ আইনজীবী বলেন, “ তাদেরই ( স্বার্থন্বেষী মহল ) যোগসাজশে শুধুমাত্র হয়রানির জন্যই ওসি প্রদীপকে মেজর সিনহা হত্যা মামলায় মিথ্যা-মিথ্যিভাবে জড়িত করা হয়েছে। ”
“ আমি আসামীর পক্ষে বলতে চাই, ওসি প্রদীপ সম্পূর্ণ নির্দোষ ও নিরাপরাধ। ”
এ ব্যাপারে আদালতের কাছে সুষ্পষ্ঠভাবে যুক্তিতর্ক তুলে ধরা হয়েছে এবং তা বিবেচনায় সুষ্ঠু ও ন্যায়-বিচার পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত।
তবে মামলার ব্যাপারে কথা বলতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম ও সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) জিয়াউদ্দিন আহমেদ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হন।
এ ঘটনায় ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী সহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলাটি আমলে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেন।
পরদিন ৬ আগস্ট পরিদর্শক লিয়াকত ও ওসি প্রদীপসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে সিনহা হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে র্যাব পুলিশের দায়ের মামলার তিনজন স্বাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এক পর্যায়ে পলাতক থাকা অবস্থায় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব গ্রেপ্তার ১৪ জন আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। এদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
মামলার আসামীরা হল, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএন এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন স্বাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাবেক এএসআই সাগর দেব।
গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন র্যাব-১৫ তে দায়িত্বরত সহকারি পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে টেকনাফ থানা পুলিশের দুই সদস্যকে আসামী করা হয়। এরা হল কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও এএসআই সাগর দেব। এরপর গত ২৪ জুন কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করে।
এদিকে গত ২৭ জুন আদালত অভিযুক্ত সব আসামীদের বিরুদ্ধে বিচার কাজ শুরুর আদেশ দিয়ে স্বাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে আদেশ দেন। এতে স্বাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে। গত ২৬ থেকে ২৮ জুন স্বাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে লকডাউন থাকায় তা অনুষ্ঠিত হয়নি।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ গ্রেপ্তার পুলিশ সদস্যদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার পর কক্সবাজারের পুলিশকে নতুন করে সাজানো হয়। এসপি থেকে কনস্টেবল- প্রায় সব পুলিশ সদস্যকে একযোগে বদলি করা হয় অন্য জেলায়।
এছাড়া ঘটনায় ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭ কার্য-দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর ৩ আগস্ট থেকে কমিটি কাজ শুরু করলেও তিন দফা সময় বাড়ানো হয়। পরে ৯ সেপ্টেম্বর কমিটি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।
এদিকে প্রধান আসামী লিয়াকত আলীর আইনজীবী মামলার অবৈধতা ও জামিন চেয়ে আবেদন করলেও আদালত তা বাতিল করে দেন। এছাড়া আসামী প্রদীপের জামিন চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত তাও বাতিল করে আদেশ দেন।
বাসস : পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর…
নিজস্ব প্রতিবেদক: চকরিয়ায় সুরাজপুর ইয়াংছা সড়কে যাত্রীবাহি সিএনজি চালিত অটোরিকশার সাথে ট্রাক গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে…
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের হ্নীলায় যৌতুকে দাবিতে মারধরে লুলুয়ান মরজান হিরা (১৭) নামে এক গৃহবধূর…
নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘পরকিয়া প্রেমের’ জেরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এ…
ইউএনএইচসিআর-এর উদ্বেগ প্রকাশ নুপা আলম : অর্থ সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কক্সবাজারের উখিয়া স্পেশালাইজড…
নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে জড়ো হয়েছিলো কয়েক…