চার জলদস্যু অস্ত্রসহ আটকের পর পুলিশে সোপর্দ

মহেশখালী প্রতিবেদক : মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় জনতার তৎপরতায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে চার জলদস্যুকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি দেশীয় লম্বা বন্দুক ও একটি ফিশিং বোট জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে ঘটিভাঙ্গা ঘাট এলাকায় কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বুঝতে পারেন, এগুলো জলদস্যু দলের সদস্য হতে পারে। একপর্যায়ে জনতা গোপনে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে এবং দেখতে পায়, তারা একটি ফিশিং বোটে অবস্থান করছে এবং সঙ্গে রয়েছে একটি দেশীয় বন্দুক।

তৎক্ষণাৎ স্থানীয়রা দলবদ্ধ হয়ে দস্যুদের ঘেরাও করে ফেলে। পালানোর চেষ্টা করলেও জনতার প্রতিরোধের মুখে তারা ব্যর্থ হয়। ধস্তাধস্তির পর চারজনকে আটক করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র ও ফিশিং বোট জব্দ করা হয়। এরপর জনতা তাদের থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে অভিযুক্তদের হেফাজতে নেয়।

তথ্য অনুযায়ী- মহেশখালী ও আশপাশের উপকূলীয় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় একটি জলদস্যু চক্র নিরীহ জেলেদের কাছ থেকে নৌকা, ইঞ্জিন ও মাছ লুট করে আসছিল। অভিযোগ রয়েছে, এই চক্রটি গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরার ট্রলারগুলোতে হামলা চালিয়ে চালক ও জেলেদের মারধর করতো এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নিতো। অনেক ক্ষেত্রে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জেলেদের অপহরণও করতো তারা।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ঘটিভাঙ্গা এলাকার শফিদুল্লাহ মালিকানাধীন একটি ফিশিং বোট ব্যবহার করে তার জামাতা সোহেল, যিনি ‘মাটি’ নামে পরিচিত, দীর্ঘদিন ধরে জলদস্যুতা চালিয়ে আসছিল। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করতো তাজিয়াকাটা এলাকার কিছু চিহ্নিত মাদক কারবারি ও সশস্ত্র অপরাধী। মাদক চোরাচালানের আড়ালে তারা গভীর সমুদ্রে ডাকাতি করত। এমনকি, জেলেদের মাছ ধরার ট্রলার জোরপূর্বক দখল করে সেটি নিজেদের কাজে ব্যবহার করতো বলে অভিযোগ রয়েছে।

জলদস্যুদের কারণে বহু জেলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। অনেক জেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে গেলেও দস্যুদের আক্রমণের শিকার হয়ে দেউলিয়া হয়েছেন। স্থানীয়রা বহুদিন ধরে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানালেও তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশেষে জনতার প্রতিরোধেই ধরা পড়লো এই দুর্ধর্ষ দস্যু চক্রের চার সদস্য।

এদিকে আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন কালারমারছড়া ইউনিয়নের ইউনুছখালী এলাকার নুর মোহাম্মদের পুত্র আবদু রশিদ, হোয়ানক ইউনিয়নের মোহরাকাটা এলাকার মোহাম্মদ সেলিমের পুত্র আশেক, বড় মহেশখালী ফকিরাঘোনা এলাকার নুরুল হাসেমের পুত্র মিজান এবং মকবুল আহমদের পুত্র জামাল।

স্থানীয়দের মতে, আটককৃত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে সাগরে জলদস্যুতা ও মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। তারা জেলেদের ভয় দেখিয়ে নৌকা ছিনিয়ে নিতো এবং যারা তাদের কথা না শুনতো, তাদের মারধর করা হতো। অনেক সময় তারা গভীর সমুদ্রে মাদক পাচারেও জড়িত ছিল। তাদের এসব কার্যক্রমে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি মদদ দিতো বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কাইছার হামিদ বলেন- গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

জলদস্যুদের আটকের পর এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছেন, প্রশাসন যেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে সাগরপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং জলদস্যু ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়।

nupa alam

Recent Posts

টেকনাফে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধুকে হত্যার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের হ্নীলায় যৌতুকে দাবিতে মারধরে লুলুয়ান মরজান হিরা (১৭) নামে এক গৃহবধূর…

3 days ago

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্ত্রী খুনের দায়ে স্বামী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘পরকিয়া প্রেমের’ জেরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এ…

3 days ago

উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতাল কার্যক্রম বন্ধ

ইউএনএইচসিআর-এর উদ্বেগ প্রকাশ নুপা আলম : অর্থ সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কক্সবাজারের উখিয়া স্পেশালাইজড…

4 days ago

কক্সবাজারে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে জড়ো হয়েছিলো কয়েক…

4 days ago

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সিসিইউ আবারও চালু

সরকারিভাবে ২ চিকিৎসক পদায়ন, আরও ২ চিকিৎসক বিনা বেতনে সেবা প্রদানে সম্মতি নুপা আলম :…

4 days ago

পেকুয়ায় আওয়ামীলীগ নেতা গ্রেপ্তার : অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক : পেকুয়ায় মনির উদ্দিন ওরফে মনু (৩৮) নামে আওয়ামীলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে…

4 days ago