নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফ উপজেলার পূর্ব ও দক্ষিণাংশের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে শনিবার দুপুর থেকে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা পর্যন্ত কোন বিস্ফোরণের শব্দ শুনা যায়নি।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম জানান, গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের মংডু শহরের আশেপাশে এলাকায় গোলাগুলির পাশাপাশি বিকট শব্দের কেঁপে উঠছিল টেকনাফ সীমান্ত। শনিবার দুপুরের পর থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন ধরনের শব্দ শোনা যায়নি।
এ পরিস্থিতি শনিবার বিকালে গুলিবিদ্ধ নারী সহ যে ৫ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে ছিল তাদের অবস্থা সম্পর্কে কিছুই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদের বিজিবি সদস্যরা নৌকায় আটকে রেখে ছিল। পরে কি করা হয়েছে তা আর বিজিবির পক্ষে জানানো হয়নি।
তবে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানোর হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
মিয়ানমারের সংঘাত পরিস্থিতিতে স্থবির হয়ে গেছে সীমান্ত বাণিজ্য। টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর ও আকিয়াব বন্দর থেকে প্রতিমাসে আড়াইশতাধিক থেকে তিনশতাধিক কার্গো ট্রলারে করে বিভিন্ন ধরনের (দৈনিক ৮০ থেকে ১৫০ ট্রাক) পণ্যসামগ্রীক আনা-নেওয়া হলেও গত এক মাস ধরে এসেছে দৈনিক ২ থেকে ৩টি কাগো ট্রলার। এতে করে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক অবসরপ্রাপ্ত মেজর সৈয়দ আনসার মোহাম্মদ কাউসার বলেন, মিয়ানমারে সাম্প্রতিকালে পরিস্থিতির কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবিরই বলা চলে। এখানকার ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন। আগে যেখানে প্রতি মাসে আড়াই শতাধিক থেকে তিনশতাধিক কাগো ট্রলারে করে পণ্য আনা-নেওয়া হতো, সেখানে এখন গত এক মাস ধরে এসেছে দৈনিক ২ থেকে ৩টি কাগো ট্রলার।
স্থল বন্দরের শ্রমিকদের মাঝি (দলনেতা) আলী আজগর বলেন, এ স্থলবন্দরের প্রায় এক হাজার শ্রমিক রয়েছে। অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। স্বাভাবিক সময়ে স্থলবন্দরে দৈনিক ৬০ থেকে ৯০টির মতো ট্রাক লোড-আনলোড হয়, কিন্তু ওপারে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এখন এক সপ্তাহে আগের মতো একদিনের কাজ ও হচ্ছে না। কোনো কোনো দিন আগে একটি ট্রাকও স্থলবন্দর থেকে ছেড়ে যায়নি।
ট্রাক চালক আমির হোসেন বলেন, আগে মাসে তিন-পাচটি ভাড়া নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম যেতে পারলেও বতমানে এ ১৭দিনে একটিও ভাড়া পায়নি। শুধু আমি নয় এ রকম আরও প্রায় দেড়-দুইশতাধিক ট্রাক রয়েছে। তারা সবাই অলস সময় পার করছেন।
টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানিকারক মোহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কয়েক মাস ধরে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি অনেক কমেছে। আমাদানি-রপ্তাণিতে ধস নেমেছে। আকিয়াব বন্দরে কিনে রাখা শত শত মণ আদা, নারকেল, শুটকি, সুপারি ও ছোলা মজুদ রয়েছে। এগুলো না আনতে না পারলে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হবে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা এ এস এম মোশাররফ হোসেন বলেন, এ বন্দর দিয়ে এক মাসে প্রায় ১০০কোটি টাকার একমাসের রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে তা ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হচ্ছে। এতে করে সরকার হারাচ্ছে বিশাল অংঙ্কের রাজস্ব।গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বন্ধ থাকলেও মিয়ানমার থেকে গত এক মাস ধরে এসেছে দৈনিক ২ থেকে ৩টি কাগো ট্রলার।
মিয়ানমারের হিয়ায়িত মাছ আমদানিকারক এম কায়সার জুয়েল বলেন, মিয়ানমারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে মংডু থেকে অনেক পণ্য আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।তবে আকিয়াব বন্দর হঠাৎ করে পণ্যভতি কাগো ট্রলার ও জাহাজ আসছে। গত শুক্রবার দুটি ট্রলারে করে দেড় হাজার বস্তা আদা, নারিকেল, আচার, সুপারি, শুঁটকি আমদানি হয়েছে।
স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধের কারণে সীমান্তে স্থলপথের পাশাপাশি নৌপথেও নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ।ওপারের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে নাফনদী ও উপকূলীয় অংশে নিরাপত্তায় টহল জোরদার হয়েছে। তবে সীমান্ত বাণিজ্য নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিপা পড়েছেন।
সীমান্ত পরিস্থিতিতে নাফনদী ব্যবহার করে গভীর সাগরে যাওয়া টেকনাফের ৬ শতাতিক ট্রলারের মালিক ও জেলেদের জীবন যাত্রায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। টেকনাফের কায়ুখালী, সাবরাং কয়েকটি ঘাট, শাহপরীরদ্বীপ ঘাট থেকে এসব ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে যেতে।
ট্রলার মালিক মোহাম্মদ হোসেন জানান, গত ১০ ফেব্রæয়ারি থেকে একটি ট্রলারও সাগরে যেতে পারেনি। প্রশাসনের পক্ষে নিদের্শনা থাকা এবং নাফনদীর ওপারে গোলাগুলির শব্দে তা বন্ধ আছে। নাফনদীতে মাছ ধরা বন্ধ আছে আগে থেকে। এই নাফনদী ব্যবহার করে গভীর সাগরে যায় ৬ শতাধিক ট্রলারের ১১ হাজারের বেশি জেলে। তারাও এখন বেকার।
সাবরাং নয়াপড়া এলাকার ট্রলার মালিক আবদুল গফুর জানান, আগে জানলে ট্রলার নাফনদীতে না এনে পশ্চিমের সাগর মোহনায় রাখতাম। কিন্তু এখন সাগরে যাওয়া যাচ্ছে না।
বিপাকে রয়েছেন চিংড়ি চাষীরাও। টেকনাফের উনচিপ্রাং সীমান্তে নাফ নদীর এপারে রমজান আলীর রয়েছে ৬০ একর চিংড়ি ঘের। ১০ ফেব্রæয়ারী গোলাগুলির পর থেকে আতংকিত তিনি।
রমজান বলেন, আমার নাফ নদীর এপারে ৬০ একর চিংড়ি ঘের আছে। আমি বর্গা নিয়ে চাষ করছি। বার্ষিক বর্গা দিতে হয় ৯ লক্ষ টাকা। চাষের সাথে জড়িত ২০ জন শ্রমিক। কর্মচারীরাও আতঙ্কিত, আমরাও আতঙ্কিত। এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে চরম লোকসান গুণতে হবে।
একই এলাকার চিংড়ি চাষি শাহীন শাহজাহান বলেন, এবছর ৫ লাখ টাকার বাগদা চিংড়ি মাছের পোনা দিয়েছি। মাছও বেশ বড় হয়েছে। কিন্তু সীমান্তে এই বছরও উত্তেজনার কারণে ঘেরে যেতে পারছি না। এতে বড় ধরনের লোকসানের ঝুঁকি বাড়ছে। কিছু করার নেই।
টেকনাফ উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, টেকনাফের হোয়াইক্যং এবং হ্নীলা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের আশপাশে ২ হাজার ৪০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে ৪০০ চিংড়ি ঘের রয়েছে। যেখানে ৮ শতাধিক চাষি জড়িত। যদি মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাসস : পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর…
নিজস্ব প্রতিবেদক: চকরিয়ায় সুরাজপুর ইয়াংছা সড়কে যাত্রীবাহি সিএনজি চালিত অটোরিকশার সাথে ট্রাক গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে…
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের হ্নীলায় যৌতুকে দাবিতে মারধরে লুলুয়ান মরজান হিরা (১৭) নামে এক গৃহবধূর…
নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘পরকিয়া প্রেমের’ জেরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এ…
ইউএনএইচসিআর-এর উদ্বেগ প্রকাশ নুপা আলম : অর্থ সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কক্সবাজারের উখিয়া স্পেশালাইজড…
নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে জড়ো হয়েছিলো কয়েক…