বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় অসহায় জনসাধারণ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরাপদ পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে নিশ্চয়তা-অনিশ্চয়তার মাঝে আছেন। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণে সৃষ্ট যুদ্ধ ও বিশ্ববিবেককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমেরিকার সমর্থনে ইসরায়েলী কসাইদের হতভাগ্য ফিলিস্তিনীদের উপর বর্বর, নির্মম গণহত্যা ও ধ্বংসলীলার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এবং দেশের সুযোগ সন্ধানী অতিমুনাফা লোভী ব্যবসায়ী নেতাদের কারসাজিতে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীন উর্ধ্বগতির কারণে মানুষ মর্মাহত ও চরম হতাশ। মরার উপর খাড়ার ঘা বিগত ছয় বছর ধরে প্রায় ১৪ লক্ষ আশ্রিত রোহিঙ্গার অপকর্ম উপদ্রæব নিয়ে কক্সবাজারবাসী খুবই উদ্বিগ্ন। দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকায় ২৮ নভেম্বর প্রথম পৃষ্টায় লালকালিতে সংবাদ শিরোনাম ছিল ’উখিয়ায় আরএসও-আরসার গোলাগুলিতে রোহিঙ্গা নিহত’ এবং ০১ডিসেম্বর লালকালিতে প্রথম পৃষ্টায় শিরোনাম ছিল ’কুতুপালং মেগা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ি ডুকে যুবককে গুলি করে হত্যা’। কয়েক দিন পর পর আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এর মধ্যে গোলাগুলিতে হতাহতের সংবাদ নিয়মিত পাওয়া যায়। রোহিঙ্গার গুলিতে বা জবাই করে অন্য রোহিঙ্গা খুনের খবর পত্রিকায় সব সময় দেখা যায়। ভ্রাতৃঘাতি রোহিঙ্গাদের পরস্পরকে হত্যার উদ্দেশ্য আধিপত্য বিস্তার। কিসের আধিপত্য? ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা,অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা,মানব পাচারের ব্যবসার ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারই মূল কারণ বলে জানা যায়। বাংলাদেশে নিরাপদে থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া আশ্রিত রোহিঙ্গারা কি তাদের ফেলে আসা মাতৃভুমি আরাকান তথা মিয়ানমারের কোন খরব রাখে না?
সুপার পাওয়ার চীনের সমর্থন নিয়েই মিয়ানমারের সেনা শাসকরা অত্যন্ত নির্মম ও বর্বরতার সাথে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা,গণধর্ষণ ও বাড়ীঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করেছিল,রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুৎ করেছিল। উন্নয়নের নামে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বাড়ীঘরের,চাষাবাদের জমিজিরাত চীনের দখলে দিয়ে দিয়েছে সেনা শাসকরা। তাই দেশে বিদেশে জাতিসংঘে চীন ভেটো পাওয়ার প্রয়োগের মাধ্যমে মিয়ানমারের সেনা শাসকদের নিরাপদে ও বেপরোয়া করে রেখেছে। কিন্তু এখন চীনের নীতির অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে বলে মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের জানা যাচ্ছে। অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসনের মাধ্যমে মিয়ানমারের পূর্ণ ক্ষমতা দখল করাকেও চীন সমর্থন দিয়েছে। অং সান সুচির সমর্থকরা তাদের হাজার হাজার গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারী সামরিক জান্তার হামলায় নিহত আহত হলেও সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে তারা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিকল্প সরকার গঠন করে দেশে বিদেশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধিকারের জন্য সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত কাচিন,কারেন,চিন,আরাকান আর্মির মত গণতন্ত্রপন্থী অং সান সুচির সমর্থকরাও পিপলস ডিফেন্স ফোর্স বা পিডিএফ নামে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে গেরিলাযুদ্ধে নামে। আমেরিকা গণতন্ত্রপন্থীদের বৈধভাবে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ’বার্মা এক্ট’ পাশ করে নতুন নতুন ক্ষেত্রে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞ দিয়ে আসছে। ২০২২ সাল থেকে গেরিলাযুদ্ধে নামা পিডিএফকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
এতদিন চীন প্রকাশ্যে মিয়ানমার সেনা শাসকদের সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে আসলেও গোপনে গেরিলা দলগুলোকেও সাহায্য দিয়ে আসছিলো। সর্বশেষ শান প্রদেশে চীন সীমান্তে বেইজিংয়ের কয়েকটি সামরিক যানে রহস্যময় আগুন লাগার পর মনে হচ্ছে গেরিলারা চীনকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। তাই গেরিলা দলগুলোর উপর পশ্চিমাদের প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে চীন নীতি পরিবর্তন করে গেরিলা গোষ্ঠিগুলোকে অধিক সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে। চীনের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে গেরিলা দলগুলো ’ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ নামে নতুন জোট গড়ে গত ২৭ অক্টোবর থেকে অনেক প্রদেশে সামরিক জান্তার সেনা চৌকিগুলোতে যৌথ হামলা চালানো শুরু করে সাফল্য পেয়েছে। দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে তারা ’অপারেশন ১০২৭’ নামে আক্রমণ চালিয়েছে। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স ইতিমধ্যে মিয়ানমার সামরিক জান্তার ২০০টি সামরিক স্থাপনা দখল করে নিয়েছে। সামরিক জান্তার সেনারা নিহত হচ্ছে,আত্মসমর্পণ করছে বা প্রতিবেশী রাষ্ট্রে পালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী শহরগুলো গেরিলারা দখল করে নিয়েছে। জেনারেল মিন অং হ্লাইং এর জান্তা সরকারের যে কোন সময় পতন হতে পারে আশংকায় তারা ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সাথে আলোচনায় বসতে প্রস্তাব দিলে গেরিলা গোষ্ঠিগুলো তা প্রত্যাখ্যান করে। উল্লেখ প্রয়োজন যে রাখাইনের স্বাধীকারের জন্য যুদ্ধরত শক্তিশালী আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সকল নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে ও রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা কামনা করেছে। গণতন্ত্রপন্থী অং সান সুচির বিকল্প সরকারের একজন মন্ত্রী বাংলাদেশে এসেই ঘোষণা দিয়েছেন তারা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের বৈধ নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে প্রতিবেশী দেশে আশ্রিত সকল রোহিঙ্গাদের সসম্মানে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রকাশ্যে অঙ্গিকার করে ঘোষণা দিয়েছে। তবে জান্তা বিরোধী যুদ্ধে তারা রোহিঙ্গাদের সক্রিয় সমর্থন ও সহায়তা চেয়েছে। রোহিঙ্গাদের দেশমাতৃকাকে সামরিক জান্তার হাত থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে শরীক হওয়ার কোন চিন্তাভাবনা নেই। রোহিঙ্গাদের আরশা-আরএসও মহাব্যস্থ আছে বাংলাদেশের মধ্যে ক্যাম্পগুলোতে তাদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে। মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের পতন হলে রোহিঙ্গারা কি আম ও ছালা দুইটাই হারাবে? দেশপ্রেমহীন রোহিঙ্গাদের কে বুঝাবে এখনই জন্মভুমি সেনা শাসনমুক্ত করার যুদ্ধে যাওয়ার উপযুক্ত সময় তাদের?
লেখক : সাবেক সভাপতি ও পিপি, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ও একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা।
বাসস : পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর…
নিজস্ব প্রতিবেদক: চকরিয়ায় সুরাজপুর ইয়াংছা সড়কে যাত্রীবাহি সিএনজি চালিত অটোরিকশার সাথে ট্রাক গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে…
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের হ্নীলায় যৌতুকে দাবিতে মারধরে লুলুয়ান মরজান হিরা (১৭) নামে এক গৃহবধূর…
নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘পরকিয়া প্রেমের’ জেরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এ…
ইউএনএইচসিআর-এর উদ্বেগ প্রকাশ নুপা আলম : অর্থ সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কক্সবাজারের উখিয়া স্পেশালাইজড…
নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে জড়ো হয়েছিলো কয়েক…