উখিয়া বন বিভাগ : উচ্ছেদে ভাঙা হল ঝুপড়ি, বহুতল ভবন নির্মাণ অব্যাহত

বিশেষ প্রতিবেদক : কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের ৮ টি বনবিটের অধিকাংশই সংরক্ষিত বনভুমি বেদখল হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা, প্রহরী ও হেডম্যানদের ম্যানেজ করে নির্মাণ করা হচ্ছে একের পর এক বহুতল ভবন। তবে দায় এড়াতে মাঝে মধ্যে ঝুপড়ি ঘর উচ্ছেদ করে থাকেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বিটের খয়রাতিপাড়া এলাকায় দুইটি টিনের ঘর দখল মুক্ত করে বনবিভাগ। উখিয়া সদর ও দোছড়ি বিটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

যদিও একই বনাঞ্চলের আশে-পাশে অসংখ্যা স্থাপনা ও বহুতল ভবন নিমার্ণ অব্যাহত রয়েছে। ফলে বৃহস্পতিবার এই ঝুপড়ি ঘর দুইটি উচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন করেছে স্থানীয় লোকজন। তাদের জানিয়েছে, যেই এলাকায় উচ্ছেদ করা হয়েছে, তার আশপাশে হাজারো পাকা বাড়িঘর রয়েছে। কিন্তু বনবিভাগের লোকজনদের ম্যানেজ করার কারনে তা উচ্ছেদ বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় না।

একই রেঞ্জের বনবিভাগের আওতাধীন শীলের ছড়া, শৈলার ডেবা, ধইল্লা ঘোনা, হাজম রোড, আদর্শ গ্রাম, কুতুপাল, পাতাবাড়ী, ভালুকিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্যা বহুতল ভবন নির্মাণ অব্যাহত থাকতে দেখা গেছে। যেখানে ভালুকিয়াপালং আমতলীতে দ্বিতল বিশিষ্ট একটি ভবনের নিমার্ণ কাজ প্রায় শেষ। বাড়িটির মালিক কে জানতে চেষ্টা করা হলেও কথা বলতে রাজী নন স্থানীয়রা। তবে এক ব্যক্তি বলেছেন, বনবিভাগ ভালো জানেন কারা এটা নিমার্ণ করেছেন।

একই ভাবে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা, কুতুপালং, থাইংখালী ও পালংখালী স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় রাস্তার পাশেই দেখা গেছে পাকা স্থাপনা নিমার্ণের দৃশ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোকজন জানান, উখিয়ায় যেখানে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু সেখানেই কালা সোনা নামক ব্যাক্তি হাজির। বনবিভাগকে ম্যানেজ করার কথা বলে আদায় করে মোটা অংকের টাকা। এবং তাকে ম্যানেজ না করলে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের লোক এসে ডিস্টার্ব করে। কালা সোনার সাথে উখিয়া রেঞ্জের সদর বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান, মুন্সি আওয়াল ও কালাম এই দুইজন কালা সোনার সকল কর্মকান্ডে জড়িত।

অভিযোগের বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে উখিয়া রেঞ্জের সদর ও দোছড়ি বিট কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অপকটে স্বীকার করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদেরও সীমাবদ্ধ আছে। তবুও পাতাবাড়ী এলাকায় অট্রালিকা নির্মাণকারী জনৈক অশোক কুমারের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী মুহাম্মদ শফিউল আলম এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দখলের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নতুন করে এখন দখল হচ্ছে না।

তিনি বলেন, অট্রালিকা নির্মাণের তথ্য থাকলে দেন। দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উখিয়া রেঞ্জ এ ৮ টি বনবিটে কি পরিমান সরকারি জমি বেদখল রয়েছে, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি স্থানীয়দের দখলের বিষয়ে পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও রোহিঙ্গাদের কারনে ৫ হাজার ৮শত, ৩৬ একর জমি বেদখল রয়েছে বলে দাবি করেন। তার কর্মকালীন সময়ে দখলবাজদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৩ হাজার মামলা দায়ের করেছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

nupa alam

Recent Posts

সোনাদিয়া দ্বীপের ৯ হাজার ৪৬৭ একর ভূমি বন্দোবস্ত বাতিল

বাসস : পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর…

13 hours ago

চকরিয়ায় অটোরিকশা ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক: চকরিয়ায় সুরাজপুর ইয়াংছা সড়কে যাত্রীবাহি সিএনজি চালিত অটোরিকশার সাথে ট্রাক গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে…

14 hours ago

টেকনাফে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধুকে হত্যার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের হ্নীলায় যৌতুকে দাবিতে মারধরে লুলুয়ান মরজান হিরা (১৭) নামে এক গৃহবধূর…

4 days ago

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্ত্রী খুনের দায়ে স্বামী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘পরকিয়া প্রেমের’ জেরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এ…

4 days ago

উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতাল কার্যক্রম বন্ধ

ইউএনএইচসিআর-এর উদ্বেগ প্রকাশ নুপা আলম : অর্থ সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কক্সবাজারের উখিয়া স্পেশালাইজড…

4 days ago

কক্সবাজারে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে জড়ো হয়েছিলো কয়েক…

4 days ago