নিজস্ব প্রতিবেদক : পাঁচ ভাইয়ের পর দীর্ঘ ১৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন রক্তিম সুশীলও; এতে মৃত্যুপুরিতে পরিণত হওয়া চকরিয়ার মালুমঘাটের সুরেশ চন্দ্র সুশীলের বাড়ীতে চলছে স্বজনদের শোকের বিলাপ। স্বজনদের চোখের ছল ছল জল বলে দিচ্ছে শোকের করুণ আর্তনাদ।
গত তিন সপ্তাহ আগে বাড়ীটির গৃহকর্তা সুরেশ চন্দ্র সুশীলের মৃত্যুর পর মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় একসাথে নিহত হয় পাঁচ সন্তান। সর্বশেষ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে আরেক ছেলেরও। মৃত্যুর এ মিছিলে বাড়ীটিকে ঘিরে এলাকায় বিরাজ করছে শোকের আবহ।
মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিসাধীন অবস্থায় মারা যান চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট রিংভং এলাকার প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র সুশীলের ছেলে রক্তিম সুশীল।
গত ৮ ফেব্রুয়ারী ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট রিংভং এলাকায় প্রয়াত বাবার শ্রাদ্ধ উপলক্ষে নয় ভাই-বোন মিলে পূজা শেষে বাড়ী ফেরার পথে পিকআপের ধাক্কায় পাঁচ ভাই নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন রক্তিম সুশীল ও তার বোন হীরা রানী সুশীল।
ঘটনায় নিহতরা হল, অনুপম সুশীল (৪৭), নিরুপম সুশীল (৪৫), দীপক সুশীল (৪০), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯)।
আহত হীরা রানী সুশীলকে মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও রক্তিম সুশীলের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। মঙ্গলবার সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাবার মৃত্যুর এক সপ্তাহ না যেতেই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একে একে ছয় ভাইকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পল্লব সুশীল (২০)।
ঘটনার পর থেকে ঠিকমত তার খাওয়া-ধাওয়া আর ঘুমও নেই। স্বজন হারানোর বেদনায় শোকাহত পল্লব প্রলাপ করছেন প্রতিনিয়ত। তার প্রলাপে ঘুরে ফিরে আসছে শুধু ভাইদের কথা। মাঝে-মধ্যে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেন ভাইদের নাম নিয়ে। নাড়ীর টানের এ করুণ চিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার আকাশ-বাতাস। তারা কান্না দেখে অঝোরে কাঁদছে এলাকাবাসীও।
অন্যদিকে স্বামী হারানোর শোক কাটতে না কাটতেই এক দুর্ঘটনায় নাড়ী ছেড়া ছয় ছেলেকে হারিয়ে শোকে নির্বাক মৃণালিনী সুশীল ওরফে মানু (৬৮)। স্বামী আর সন্তানদের বিয়োগ বেদনায় তার মুখে কোন কথা নেই। অঝোরে ঝরে পড়া কান্নার জল-চোখে ফেল ফেল তাকিয়ে রইছেন শুধু। স্বজনদের কথায় কোন উত্তর না দিয়ে ফেল ফেল তাকিয়ে থাকা তার অভিব্যক্তি যেন বলে দিচ্ছে করুণ আর্তনাদ।
এদিকে রক্তিম সুশীলের মৃত্যুর খবরে সরেজমিন নিহতের বাড়ী ঘুরে দেখা গেছে, স্বজন হারানোর শোকের নিস্তবদ্ধতা ভর করেছে বাড়ীটিকে ঘিরে। এলাকায় বিরাজ করছে সুনশান নিরবতা। নিহতের স্বজনদের পাশাপাশি এলাকাবাসীর চোখে-মুখেও ছল ছল জল। বাড়ীটি যেন রূপ নিয়েছে এক মৃত্যুপুরিতে।
ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিব্যক্তি জানতে চাইলে জুড়ে দিচ্ছে কান্নায় করুণ আর্তনাদ। তারা কোন কথায় বলছেন না। একসঙ্গে স্বামী হারিয়ে বিধবা হওয়া পাঁচ নারী বাড়ীর উঠানে বসে আছেন; দেবরের মৃত্যুর সংবাদে নতুন করে ভেঙ্গে গেছে তাদের শোকের বাঁধ। বিমর্ষ বদন যেন তাদের এখন নিত্যসঙ্গী।
ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বান্দরবানের লামা উপজেলা থেকে বাড়ীতে এসেছেন দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুন্নী সুশীল।
মুন্নী বলেন, “ গত তিনদিন আগে আমার মা চমেক হাসপাতালে গিয়েছিলেন সন্তানকে দেখতে। ছেলেকে আইসিইউতে পড়ে থাকতে দেখে মা অঝোরে দেখেছেন। রক্তিমকে নাম ধওে অনেক ডাকা ডাকি করেছিলেন; কিন্তু কোন সাড়া পাননি। মায়ের ইচ্ছে ছিল ছেলে অন্তত চোখ মেলে হলেও তাকাবেন। কিন্তু ঈশ^র সেই ইচ্ছে পূরণ করেননি। এখন মায়ের সেই ইচ্ছে আজীবন অপূর্ণ থেকে যাবে। মায়ের কান্না এখন থামানোই যাচ্ছে না। ”
রক্তিমের মৃত্যুর খবরে মহেশখালী থেকে বাড়ীটিতে এসেছেন নিহতের পিসিতো ভাই লিটন শর্মা। তার চোখে-মুখেও স্বজন হারানোর কান্নার ছল ছল জল।
লিটন বলেন, একসঙ্গে ছয়জন স্বজন হারানোর ঘটনা কোনভাবে মানতে পারছেন না। নিহতদেও স্বজনদের সমবেদনা জানানোর ভাষাও তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। এখন শোকের কাতর হওয়াটাই তাদের একমাত্র অবলম্বন।
তিনি জানান, বিকালে রক্তিমের লাশ চমেক হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তার মৃতদেহ বহনকারি গাড়ী বাড়ীর উদ্দ্যেশে রওনা দিয়েছে। রাত ৮ থেকে ৯ টার মধ্যে গাড়ীটি চকরিয়া পৌঁছাবে। এরপর স্থানীয় শ্মশানে তার সৎকারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারী দুর্ঘটনায় নিহতদের ভাই পল্লব সুশীল বাদী হয়ে পিকআপ চালককে আসামি কওে চকরিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত পিকআপটি জব্দ করলেও চালক ও মালিককে শনাক্ত করতে পারছিল না।
পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারী রাতে র্যাবের একটি দল রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে পিকআপ চালক সাইদুল ইসলাম সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হলে তদন্তকারি কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও সম্পন্ন করেছে।
বিশেষ প্রতিবেদক : ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮ লাখ…
নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড় কেটে সংঘবদ্ধ মাটির পাচারকারি চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার…
টেকনাফ প্রতিবেদক : সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির চলমান…
নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার পৌরসভাকে প্লাস্টিক বর্জ্য মুক্ত করতে উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সাথে যৌথভাবে কাজ…
বিশেষ প্রতিবেদক : কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও খুরুশকুল বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে…
রামু প্রতিবেদক : রামুতে ড্রাম্প ট্রাক উল্টে চালকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত ২ টার…