আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবং ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করার পর জরুরি অবস্থা জারির মধ্য দিয়ে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী।
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মিয়ানমারে বেসামরিক সরকার এবং প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটল বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) মুখপাত্র মিও নয়েন্ট জানান, সোমবার ভোরে রাজধানী নেপিডোতে অভিযান চালিয়ে তাদের শীর্ষ নেতাদের আটক করা হয়।
এর কয়েক ঘণ্টার পর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে এক বছরের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেওয়া হয় বলে রয়টার্সের খবরে জানানো হয়।
টেলিভিশনে ওই ঘোষণায় বলা হয়, গত নির্বাচনে ‘জালিয়াতির’ ঘটনায় সরকারের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারি করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাবাহিনীর সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাইংয়ের হাতে।
বিবিসি লিখেছে, মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সেনা সদস্যরা প্রাদেশিক সরকারের প্রধানদের বাসায় বাসায় গিয়ে তাদের আটক করছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
এনএলডির মুখপাত্র নয়েন্ট রয়টার্সকে বলেছেন, যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সু চি ছাড়াও প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্ট এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতারা আছেন।
নিজেও গ্রেপ্তার হতে পারেন- এমন ধারণা করছেন জানিয়ে নয়েন্ট বলেন, “আমি আমাদের জনগণকে বলতে চাই, চটজলদি প্রতিক্রিয়া জানাবেন না এবং চাই তারা আইন অনুযায়ী কাজ করুক।”
সোমবার থেকেই নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোররাতের দিকে থেকেই রাজধানীতে ফোন লাইনগুলোতে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নেপিডোর পাশাপাশি মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গনেও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সব ব্যাংক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে দেশটির ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ফের হুমকিতে গণতন্ত্র
২০১১ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরুর আগ পর্যন্ত অর্ধশতক মিয়নমার সেনাবাহিনীর শাসনেই ছিল। সে সময় দীর্ঘ ১৫ বছর গৃহবন্দি করে রাখা হয় সু চিকে।
গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অহিংস লড়াইয়ের জন্য ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। এরপর তার দল এনএলডি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসে ২০১০ সালে মুক্তি পান সু চি।
২০১২ সালের উপ-নির্বাচনে ৪৫টি আসনের মধ্যে ৪৩টিতে জয়ী হয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয় সু চির দল। এরপর ২০১৫ সালের নির্বাচনে এনএলডি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে।
সেই সরকারের মেয়াদ শেষে গত বছরের ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি বড় জয় পায়। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেখানে ৩২২টি আসনই যথেষ্ট, সেখানে এনএলডি পেয়েছে ৩৪৬টি আসন।
কিন্তু সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলে।
দেশটির নির্বাচন কমিশন অনিয়মের অভিযোগ নাকচ করলেও উত্তেজনা বাড়তে থাকায় মিয়ানমারে ফের সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেদক জনাথান হেড বলেন, মিয়ানমারের সেনবাহিনী এক দশক আগে যে সংবিধান রচনা করেছিল, সোমবারের সামরিক হস্তক্ষেপ সেই সংবিধানেরই সুস্পষ্ট লঙঘন। অথচ গত শনিবারও সেনাবাহিনী সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকারের কথা বলেছিল।
“সু চির মত নেতাদের আটক করার ঘটনা উসকানিমূলক এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি পদক্ষেপ, যা তীব্র বাধার মুখে পড়তে পারে।”
মিয়ানমারে যা ঘটছে, তা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র স্টিভেন দুজারিক।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের সব পক্ষকেই উসকানিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার এবং গণতান্ত্রিক রীতি মেনে নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেছেন ভোটের ফল নিয়ে কোনো বিরোধ থাকলে আইনিভাবেই তা মেটাতে হবে।
গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের জন্য মিয়ানমারের জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, জাতিসংঘ তার প্রতি সমর্থন দিয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করার যে কোনো উদ্যোগের বিরোধিতা করবে বাইডেন প্রশাসন।
সু চিসহ আটক নেতাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
তিনি বলেছেন, “গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, শান্তি এবং উন্নয়নের প্রতি মিয়ানমারের জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে। সামরিক বাহিনীর উচিত এখনি তাদের ওই পদক্ষেপ থেকে সরে আসা।”
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী মারিজ পেইনি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, আইনি প্রক্রিয়ায় বিরোধ মীমাংসা এবং বেসামরিক সব নেতা ও অন্য যাদের বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে, তাদের সবাইকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া বিষয়টিকে মিয়ানমারের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তবে মিয়ানমারের প্রধান মিত্র চীনের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও আসেনি।
বাসস : পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর…
নিজস্ব প্রতিবেদক: চকরিয়ায় সুরাজপুর ইয়াংছা সড়কে যাত্রীবাহি সিএনজি চালিত অটোরিকশার সাথে ট্রাক গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে…
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের হ্নীলায় যৌতুকে দাবিতে মারধরে লুলুয়ান মরজান হিরা (১৭) নামে এক গৃহবধূর…
নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘পরকিয়া প্রেমের’ জেরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এ…
ইউএনএইচসিআর-এর উদ্বেগ প্রকাশ নুপা আলম : অর্থ সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কক্সবাজারের উখিয়া স্পেশালাইজড…
নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে জড়ো হয়েছিলো কয়েক…