ট্রাম্প অবশেষে করোনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন

প্রথম আলো : করোনাভাইরাস শুধু আমেরিকার জনগণকেই তাড়া করছে না; এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও তাড়া করছে। পশ্চিম ও দক্ষিণের রাজ্যে এখন প্রতিদিন ৬০ হাজার লোকের সংক্রমণের সংবাদ আসছে। প্রতিদিন মৃত্যুর তালিকায় এক হাজার লোকের নাম যোগ হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একসময় বলেছিলেন, করোনা মহামারি শেষ হয়ে গেছে। অথচ এখন বলছেন, শেষ হওয়ার আগে আরও খারাপ হবে।

ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলে রিপাবলিকান পার্টির কনভেনশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন ট্রাম্প। অথচ মহামারির সময়েই ঢাকঢোল পিটিয়ে সমাবেশ করেছেন। মাস্ক পরা নিয়ে নানা কথা বলেছেন। এখন নিজের মাস্ক পরা ছবি দিয়ে জনগণকেও আহ্বান জানাচ্ছেন তা পরার জন্য। পরিস্থিতির কারণেই বিষয়টা আর হালকাভাবে নিতে পারছেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। জনমত জরিপের নিম্নগতি তাঁকে তাড়া করছে। ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ চেষ্টায় নেমেছেন ট্রাম্প।

নভেম্বরের নির্বাচনের জন্য আর ১০০ দিন বাকি। ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী জো বাইডেনের চেয়ে সর্বত্রই পিছিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার রাজনীতির ইলেকটোরাল কলেজের হিসেবেও এখন পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। পুনর্নির্বাচনের জন্য পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, মিনেসোটাসহ কিছু রাজ্যে ট্রাম্পকে অবশ্যই নির্বাচনে জয় পেতে হবে। সেসব রাজ্যেও তাঁর অবস্থা ভালো ঠেকছে না। এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মুখে যা–ই বলুন না কেন, তাঁর প্রচার শিবিরে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই আবার তিনি প্রচারণা প্রধান পরিবর্তন করেছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু গোড়া সমর্থক আছেন, তাঁরা বলতেই থাকেন পুরোনো কথা, ট্রাম্প জিতে যাবেন। এসব জরিপ ভুয়া। ২০১৬ সালেও কোনো জরিপে ট্রাম্প জেতার কথা বলা হয়নি। এবারও একই কাণ্ড ঘটবে। মন্তব্য আর উদ্দীপনায় এসব সমর্থকেরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়েও নিজেদের আত্মবিশ্বাসী দেখাতে ভালোবাসেন। এসব লোকজনের মধ্যে কোনো উদ্বেগ না থাকলেও স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্বেগ টের পাওয়া যাচ্ছে তাঁর সর্বশেষ আচরণে। কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন, এমন দেখানোর জন্য এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আমেরিকায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ৪৮ হাজার পেরিয়ে গেছে। ৪২ লাখের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে আমেরিকায়। নতুন নতুন এলাকা এখন সংক্রমিত হয়েছে। আমেরিকার বহু প্রান্তিক এলাকায় এ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম অবস্থা বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যসেবীরা। আমেরিকার নগরকেন্দ্রগুলোর মতো প্রান্তিক এলাকায় বহু মানুষের ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত হাসপাতালও নেই। চিকিৎসক নেই।

২১ জুলাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের লোকজনের পরামর্শেই তিনি তাঁর সুর পাল্টেছেন। সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমসসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রচার শিবিরের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। তাঁদের পরামর্শেই ট্রাম্প করোনা মোকাবিলায় নিজেকে সিরিয়াস দেখানোর চেষ্টা করছেন এখন।

প্রতিটি জরিপেই মহামারি মোকাবিলায় ট্রাম্পের ওপর আমেরিকার নাগরিকদের অসন্তোষের কথা উঠে আসছে। করোনাভাইরাসকে এখনো তিনি ‘চায়না ভাইরাস’ বলছেন। হোয়াইট হাউসের টাস্ক ফোর্সের সদস্য শীর্ষ সংক্রামক বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসির সঙ্গেও তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বেশ আগে থেকেই। ফাউসি শুরু থেকেই করোনাভাইরাস নিয়ে আমেরিকার জনগণকে সতর্ক করে দিচ্ছিলেন। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্টো কথা বলে আসছেন সব সময়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এপ্রিল মাসেই নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং বন্ধ করে দেন ট্রাম্প।

২১ জুলাই ট্রাম্প বলেছেন, আবার এ নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিং করবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চেষ্টা করছিলেন, দেশের অর্থনীতি দ্রুত চালু করতে পারলে তাঁর জন্য ভালো হবে। করোনাভাইরাস তাঁকে সে সুযোগ দিচ্ছে না। ফাউসিসহ বিশেষজ্ঞদের সতর্ক বার্তা অবজ্ঞা করেই পুরো দেশ খুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন ট্রাম্প। করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত নিউইয়র্ক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখাতে পারলেও আমেরিকার রক্ষণশীল রাজ্যগুলোতে এ নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়ে যায়।

জনস্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আগামী নির্বাচনে মূল্য দিতে হবে বলে তাঁর প্রতি সমর্থনে এখনও ঝুলে থাকা লোকজন মনে করেন। হোয়াইট হাউস থেকে যদিও বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি আগেও গুরুত্ব দিয়েছেন, এখনো দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রিপাবলিকান পার্টির সূত্র উল্লেখ করে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে ভিন্ন কথা। রিপাবলিকান দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাই এখন মনে করছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুধু নিজের পুনর্নির্বাচনকেই ঝুঁকিপূর্ণ করেননি, আসছে নির্বাচনে সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও রিপাবলিকান দল হারাতে পারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণেই।

tawhid

Recent Posts

সোনাদিয়া দ্বীপের ৯ হাজার ৪৬৭ একর ভূমি বন্দোবস্ত বাতিল

বাসস : পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর…

3 hours ago

চকরিয়ায় অটোরিকশা ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক: চকরিয়ায় সুরাজপুর ইয়াংছা সড়কে যাত্রীবাহি সিএনজি চালিত অটোরিকশার সাথে ট্রাক গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে…

3 hours ago

টেকনাফে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধুকে হত্যার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের হ্নীলায় যৌতুকে দাবিতে মারধরে লুলুয়ান মরজান হিরা (১৭) নামে এক গৃহবধূর…

3 days ago

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্ত্রী খুনের দায়ে স্বামী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘পরকিয়া প্রেমের’ জেরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এ…

3 days ago

উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতাল কার্যক্রম বন্ধ

ইউএনএইচসিআর-এর উদ্বেগ প্রকাশ নুপা আলম : অর্থ সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কক্সবাজারের উখিয়া স্পেশালাইজড…

4 days ago

কক্সবাজারে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে জড়ো হয়েছিলো কয়েক…

4 days ago