রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনায় আক্রান্ত ৬২, মৃত ৬, সুস্থ ১৩

বিশেষ প্রতিবেদক : উখিয়া টেকনাফে মিয়ানমার থেকে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। ৩৪ টি ক্যাম্পে এসব রোহিঙ্গাদের বসবাস। ক্যাম্পে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৬ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ১৩ জন। আক্রান্ত হয়েছে ৬২ জন রোহিঙ্গা। তাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য রয়েছে ১৫ টি বড় ফিল্ড হাসপাতাল ছাড়াও ১২০ টি হেলথপয়েন্ট রয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অত্যাচার নিপীড়ন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। মানবিক কারনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব রোহিঙ্গাদেরকে টেকনাফের ৩৪ টি ক্যাম্পে আশ্রয় এর ব্যবস্থা করে। এরপর থেকে রোহিঙ্গারা এসব ক্যাম্পে বসবাস করে আসছে। বিশ্বে করোনা মহামারি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর। এসব ক্যাম্পেই যাতে এর প্রভাব না পড়ে সেজন্য শুরু থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ মাহবুবুর রহমান তালুকদার।

তিনি বলেন, করোনা মহামারী যাতে ক্যাম্পে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ৩৪ টি ক্যাম্প কে লকডাউন করা হয়। এরপর থেকে সেখানে করোনা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করার পাশাপাশি চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ শুরু করি।

কক্সবাজার শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডাঃ আবু তোহা জানান, সর্বশেষ উখিয়া উপজেলার বালুখালী ১১ নম্বর শরনার্থী ক্যাম্পের ব্লক সি – ৭ এর বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ রোহিঙ্গা গত ১২ জুলাই জ্বর শ্বাস কস্ট সহ করোনা উপসর্গ নিয়ে কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পে অবস্থিত আইওএম পরিচালিত আইসোলেটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়। ঐ দিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিপিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। ১৩ জুলাই তার করোনা পরিক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ১৪ জুলাই মঙ্গলবার বিকেলে বৃদ্ধ এই রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। এই বৃদ্ধ সহ উখিয়া ও টেকনাফ শরনার্থী ক্যাম্পে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া রোহিঙ্গারা সকলেই ৬০ উর্ধ্ব বয়সী। করোনায় প্রথম রোহিঙ্গা মারা যায় গত ৩০ মে ।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জুলাইয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন বলেন, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আইসোলেশন সেন্টারে ৪ শ বেড প্রস্তুত রাখা আছে। আরো ৫শ আইসোলেশন বেড প্রস্তুতির কাজ চলছে।

উখিয়ার কুতুপালং এর চার নাম্বার ক্যাম্পের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, আবুল কাশেম, মোহাম্মদ শাহেদ, আজগর আলী, ও মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমাদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা এখানে খুব ভালো আছি। তবে আমরা চাই ক্যাম্পের মধ্যে যেন বাহির থেকে কোন লোক না আসে। তাহলে আমরা আরো নিরাপদ থাকতে পারব।
টেকনাফের নয়াপাড়া লেদা ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, মিয়ানমারের কোনদিন আমরা ওষুধ দেখতে পাইনি। এখানে এসে অসুখ হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা হাসপাতাল ওষুধ সবকিছু পাচ্ছি। এজন্য শুকরিয়া আদায় করছি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে। বাংলাদেশের জন্য দোয়া করছি আমরা সবসময়।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, ১৮ জুলাই পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফ শরনার্থী শিবিরে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৬২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১৩ জন রোহিঙ্গা। মারা গেছে ৬ জন।

nupa alam

Recent Posts

সোনাদিয়া দ্বীপের ৯ হাজার ৪৬৭ একর ভূমি বন্দোবস্ত বাতিল

বাসস : পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর…

5 hours ago

চকরিয়ায় অটোরিকশা ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক: চকরিয়ায় সুরাজপুর ইয়াংছা সড়কে যাত্রীবাহি সিএনজি চালিত অটোরিকশার সাথে ট্রাক গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে…

5 hours ago

টেকনাফে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধুকে হত্যার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের হ্নীলায় যৌতুকে দাবিতে মারধরে লুলুয়ান মরজান হিরা (১৭) নামে এক গৃহবধূর…

3 days ago

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্ত্রী খুনের দায়ে স্বামী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘পরকিয়া প্রেমের’ জেরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এ…

3 days ago

উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতাল কার্যক্রম বন্ধ

ইউএনএইচসিআর-এর উদ্বেগ প্রকাশ নুপা আলম : অর্থ সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কক্সবাজারের উখিয়া স্পেশালাইজড…

4 days ago

কক্সবাজারে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে জড়ো হয়েছিলো কয়েক…

4 days ago