কারিগরি শিক্ষায় বদলাল তাসলিমার জীবন

প্রথম আলো : সুনামগঞ্জের যেখানে তাসলিমাদের বাড়ি, সেখানে মেয়েদের পড়াশোনা বা কাজের উদাহরণ নেই বললেই চলে। লেখাপড়ার দৌড় খুব বেশি হলে মাধ্যমিক, যার গণ্ডি অধিকাংশ মেয়েই পার হতে পারে না। পড়াশোনার সুযোগ বা পারিবারিক আগ্রহের অভাব তো আছেই, মেয়েরাও মেনে নিয়েছে বিয়ে করে সংসার করাই তাঁদের জীবন। একা তাসলিমাই ভেবেছিলেন, অনেক পড়তে হবে, কাজ করতে হবে, জীবন বদলাতে হবে। সেই তাসলিমাই এখন উদাহরণ তাঁর এলাকার অনেক মেয়ের জন্য।

তাসলিমা কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করা একজন দক্ষ কর্মী। তিনি কাজ করেন প্রাণ-আরএফএলের নরসিংদীর কারখানায়, ওয়েল্ডিং কোয়ালিটি চেকার হিসেবে। মাত্র ২১ বছর বয়সী তাসলিমা নিজের খরচ মিটিয়ে এখন পরিবারকেও সহায়তা করেন।

কোভিডের কারণে তাসলিমা এখন সিলেটে বোনের বাড়িতে আছেন। লেখাপড়ার জন্য ২০১৫-তে কারিগরি সমমানের এসএসসি পরীক্ষার পর থেকেই তিনি সিলেটে। যখন সুনামগঞ্জ ছাড়েন, পরিবার থেকে বিয়ের চাপ ছিল, এলাকার অধিকাংশ মেয়ে এ বয়সেই বিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি তাসলিমার নিজের ছোট বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে দু বছর আগে। তাসলিমা একাই ছিলেন যিনি শুধু ছুটে গেছেন নিজের যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টায়।

২০১৫ থেকে ২০১৯, তাসলিমা সিলেট টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে ওয়েল্ডিংয়ে ডিপ্লোমা পাস করেন। এরপর অনন্ত বসে থাকা, চাকরি নেই, কাজ নেই। ‘পরিবার থেকে তখন আবারও বিয়ের চাপ এসেছিল, আমারও জেদ ছিল চাকরি পেতেই হবে।’ এমন কঠিন দিনে তাসলিমার হাতে আসে স্কিলস ২১ নামে ৪ মাসের একটি প্রশিক্ষণের সুযোগ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এই প্রশিক্ষণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল চাকরির নিশ্চয়তা। তাসলিমা যুক্ত হয়ে যান, প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিও জুটে যায় প্রাণ-আরএফএলের কারখানায়।

তাসলিমার মতে, সেটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অথচ কঠিন সময়। সুন্দর, কারণ হাতে চাকরি আছে আর কঠিন কারণ রক্ষণশীল পরিবারের বাইরে এই প্রথম তাঁর বের হওয়া, স্বভাবতই রাজি ছিলেন না কেউই। কিন্তু পরিবারের মানুষেরা আস্থা রাখেন তাঁদের মেয়েটির সক্ষমতার ওপর। এভাবেই ২০২০-এর জানুয়ারিতে তাসলিমা আসেন নরসিংদীতে, কারখানার হোস্টেলে থাকতে।

বাড়ির বাইরে সেই প্রথম জীবন দেখা তাসলিমার, বয়স মোটে ২০। ‘জানেন প্রথমে খুব খারাপ লাগত। জীবনযাপন আলাদা, খাবার আলাদা, আপন কেউ পাশে নেই। তবে এত বড় কারখানায় কাজ করতে পেরে খুব গর্ববোধ হতো’, বলেন তাসলিমা। প্রথম মাসে বেতন হয় ৮ হাজার ৫০০ টাকা, অর্ধেকটাই পাঠিয়ে দিয়েছেন বাড়িতে। আয় হওয়ার পর বাড়িতে আস্থাও বেড়েছে।

করোনার প্রাদুর্ভাবে তাসলিমা আবার ফিরে এসেছেন সিলেটে। ভাবছেন, আবার কাজে ফিরে যাওয়া দরকার। কাজ শিখেছেন তো চাকরি করার জন্যই। কারিগরি শিক্ষা নিয়ে নিজের গণ্ডি থেকে বের হওয়ার তাঁর এই উদাহরণ তাঁর প্রতিবেশের অন্য মেয়েদেরও সাহস দেবে—এটাই তাসলিমার প্রত্যাশা।

tawhid

Recent Posts

সোনাদিয়া দ্বীপের ৯ হাজার ৪৬৭ একর ভূমি বন্দোবস্ত বাতিল

বাসস : পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর…

7 hours ago

চকরিয়ায় অটোরিকশা ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক: চকরিয়ায় সুরাজপুর ইয়াংছা সড়কে যাত্রীবাহি সিএনজি চালিত অটোরিকশার সাথে ট্রাক গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে…

7 hours ago

টেকনাফে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধুকে হত্যার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের হ্নীলায় যৌতুকে দাবিতে মারধরে লুলুয়ান মরজান হিরা (১৭) নামে এক গৃহবধূর…

3 days ago

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্ত্রী খুনের দায়ে স্বামী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘পরকিয়া প্রেমের’ জেরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এ…

3 days ago

উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতাল কার্যক্রম বন্ধ

ইউএনএইচসিআর-এর উদ্বেগ প্রকাশ নুপা আলম : অর্থ সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কক্সবাজারের উখিয়া স্পেশালাইজড…

4 days ago

কক্সবাজারে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে জড়ো হয়েছিলো কয়েক…

4 days ago