বিডিনিউজ: চেয়ে-চিন্তে জীবন নির্বাহ করার গণ্ডি ভেঙে স্বনির্ভর হওয়ার যে লড়াই করছিলেন বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা, করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে তা থমকে গেছে।
সামাজিক দূরত্বের বিধি মানতে গিয়ে উপার্জন বন্ধ হওয়ায় এই প্রান্তজনেরা পড়েছেন চরম সংকটে।
সমাজে ‘হিজড়া’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তৃতীয় লিঙ্গের সোহাগী ২০১৮ সালে সাভারের হেমায়েতপুরে একটি বিউটি পার্লার খোলেন।
কিন্তু ব্যবসা দাঁড় করার চেষ্টার মধ্যেই মহামারীর কারণে তা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। উপার্জন হারিয়ে এখন তার দিশাহারা অবস্থা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সোহাগী বলেন, “এ বছরে করোনা না আসলে দাঁড়িয়ে যেতাম। কিন্তু এখন পথে বসার অবস্থা হয়ে গেছে।”
গত চার মাসের ধাক্কায় দোকান ভাড়া, বাসা ভাড়া সব বকেয়া পড়েছে। এখন খাবার জোটাতেও তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।
“সামনের দিন কীভাবে পাড়ি দেব, কীভাবে চলব, খাব কী- অনেক টেনশনে আছি।”
ধামরাইয়ে সোহাগীর বিউটি পার্লার মহামারীর কারণে বন্ধ, উপার্জন হারিয়ে এখন তার দিশাহারা অবস্থা। স্বাবলম্বী হতে চাওয়া সোহাগী তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের বিউটি পার্লারের কাজের প্রশিক্ষণ দিতেন। নিজের বিউটি পার্লারে পাঁচজনের কর্মসংস্থানও তিনি করেছেন।
“তাদের খাওয়াদাওয়া-ভরণপোষণ আমাকেই করতে হয়। কোন খরচই তো কমে নাই, কিন্তু ইনকাম নাই। কিছু টাকা ছিল, সেগুলোও বাসা ভাড়া দিয়ে ভেঙে ফেলছি।”
এই সময়ে সরকারি কোনো সহায়তা পাননি বলে জানান এই বিউটিশিয়ান।
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করা আরিফা ইয়াসমীন ময়ূরী তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ায় কোথাও চাকরিতে ঢুকতে পারেননি।
শেষে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে ২০১৩ সালে জামালপুরে গড়ে তোলেন সিঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থা। হস্তশিল্পের মাধ্যমে ৬৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন তিনি।
এসএমই জাতীয় উদ্যোক্তা পুরস্কার ও ঢাকা বিভাগে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পদক পাওয়া আরিফাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসের কারণে।
“এখন খুব খারাপ অবস্থায় আছি আমরা। সবাই খুব কষ্টে আছে। কারও তো কাজ নাই, তাদের কাজ দিতে পারছি না।”
সরকারি প্রণোদনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছিলাম, মহামারীর মধ্যে তিনি আমাদের দুই লাখ টাকা দিয়েছেন।
“আমরা তো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাসহ দেশের বড় বড় সব মেলায় অংশ নিই। আমরা চাই আমাদেরও প্রণোদনা দেওয়া হোক।”
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করা আরিফা ইয়াসমীন ময়ূরী তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ায় চাকরিতে ঢুকতে পারেননি, শেষে নিজেই হয়েছেন উদ্যোক্তা সচেতন হিজড়া সমাজ সংঘের সভাপতি ইভান আহমেদ কথা আইসিডিডিআর,বির এইচআইভি প্রকল্পে কাজ করার পাশাপাশি নাচের দল ও ভ্রাম্যমাণ বিউটি পার্লার পরিচালনা করেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সহকর্মীদের নিয়ে দুর্দশায় পড়ার কথা জানান তিনি।
“সবাই অনেক আর্থিক কষ্টে আছি। মার্চ থেকেই কাজ একেবারে বন্ধ। মা-বাবা, আত্মীয়দের সাথেও সম্পর্ক নেই। পরিস্থিতিটা নির্যাতনের মত হয়ে যাচ্ছে।”
এজন্য তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য তিনি কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।
“অনেকে অনেকদিন ধরে ভাড়া দিতে পারছে না। বাড়িওয়ালার কথায় বাসা ছেড়ে দিতে হচ্ছে তাদের।”
বেসরকারি উদ্যোগে কিছু ত্রাণ পেলেও তা অপর্যাপ্ত জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকার ২৫০০ টাকা করে দিচ্ছে দরিদ্র-অসহায়দের। কিন্তু আমরা কয়জন? আমাদের তো পেট ভরে খাওয়াতে পারে। কোভিডে বিশ্ব নুয়ে পড়ছে, এ সময়ও সরকার আমাদের জন্য কিছু করছে না। আমরা মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।”
ধামরাই এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের বিভিন্ন পার্লার, খামার ও কর্মসংস্থানের অন্যান্য উদ্যোগের সমন্বয় করেন অনন্যা বণিক। খামারি উদোক্তারা কিছুটা ধাক্কা সামলাতে পারলেও বাকিরা কঠিন সঙ্কটে পড়েছে জানান তিনি।
“আমরা যারা বিজনেসটা শুরু করেছিলাম, মূলধনটা কেউ দিয়েছে; এটার উপর ভালই চলছিলাম। কখনোই ভাবিনি এমন একটা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ব। প্রতিদিন যারা ইনকাম করতাম, তাদের ঝামেলাটা বেশি হচ্ছে। আমরা ১৫-২০ জন উদ্যোক্তা ছিলাম। এখন মুখ থুবড়ে পড়ছি সবাই।”
ইভান আহমেদ কথা আইসিডিডিআর,বির এইচআইভি প্রকল্পে কাজ করার পাশাপাশি নাচের দল ও ভ্রাম্যমাণ বিউটি পার্লার পরিচালনা করেন। অনন্যা একটি নাচের দলও পরিচালনা করেন, করোনাভাইরাসে আয় বন্ধ হয়েছে সেখান থেকেও।
“বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাদের টিম নাচত। শো করলে ইনকাম হত। ৪/৫ মাস ধরে সে সুযোগও নেই।”
সমস্যা সমাধানে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা থেকে তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে ধামরাইয়ের মেয়রের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানান অনন্যা।
তিনি বলেন, “কর্মচারী, দোকান ভাড়া, কারেন্ট বিল, নেট বিল, নিজেদের খরচ- এসবের জন্য নগদ অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু চার মাস ধরে দোকানের শাটার বন্ধ। টাকাটা পাচ্ছি কোথায়? সব বকেয়া পড়ে আছে।
“আমরা টুকটাক সাহায্য পেয়েছি ঈদের আগ পর্যন্ত। এরপর আর পাইনি। যা পেয়েছি তা এনাফ না।”
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে ‘সাদাকালো’ নামের একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অনন্যা।
তিনি বলেন, “আমাদের ১৩৫ জন সদস্য। যাদের বেশিরভাগই সাহায্য নিয়ে চলত। তাদের এখন কি যে অবস্থা, তা বলে বোঝানো যাবে না।”
ববি এইচএসসি পাস করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঢুকেছিলেন। কিন্তু পরিচয় প্রকাশের পর চাকরি যায় তার। এখন রাজধানীর মগবাজারের রেলগেইট এলাকার মানুষের কাছে হাত পেতে দিন চলতে হয়।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে ‘সাদাকালো’ নামের একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অনন্যা বণিক। ববি বলেন, “এই সময়টায় আমাদের চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। অন্যরাও এ সময় কষ্ট করছে। কিন্তু আমাদের কষ্ট অনেক বেশি।
“মানুষের কাছে হাত পেতেই তো আমরা চলি। কারও বাচ্চা হলে, বিয়ে হলে- সেখানে নাচ-গান করে আনন্দ করি। সেখান থেকে টাকা পাই, আমাদের কষ্টটাও ভুলে থাকি এভাবে। কিন্তু এখন তো এসব কিছুই বন্ধ!”
মহামারীকালে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য সরকার যে বিশেষ কোনো উদ্যোগ এখনও নেয়নি সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ কথায় স্পষ্ট।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা তাদের জন্য প্রজেক্ট নিচ্ছি। সেটি হলে প্রচার করে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
বাসস : পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর…
নিজস্ব প্রতিবেদক: চকরিয়ায় সুরাজপুর ইয়াংছা সড়কে যাত্রীবাহি সিএনজি চালিত অটোরিকশার সাথে ট্রাক গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে…
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের হ্নীলায় যৌতুকে দাবিতে মারধরে লুলুয়ান মরজান হিরা (১৭) নামে এক গৃহবধূর…
নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘পরকিয়া প্রেমের’ জেরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন। এ…
ইউএনএইচসিআর-এর উদ্বেগ প্রকাশ নুপা আলম : অর্থ সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কক্সবাজারের উখিয়া স্পেশালাইজড…
নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে জড়ো হয়েছিলো কয়েক…